কৃষি ডেস্ক: শস্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হল, নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল। কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারীর অবদানের এমন স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে ফসলের মাঠে নারীদের ভূমিকা রাষ্ট্র স্বীকৃত নয়।
দেশের মোট নারী শ্রমিকের ২৬ ভাগই কাজ করেন কৃষি খাতে। বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ১৯ ভাগ।। ফসল উৎপাদনের ২১টি ধাপের ১৭টিতেই সরাসরি অংশগ্রহণ করেন নারীরা। কিন্তু এত পরিসংখ্যান থাকার পরও এখনও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি তারা। বাজারমুল্যের চেয়ে মজুরিও পান কম। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন সচল রাখার স্বার্থেই নারী কৃষকদের স্বীকৃতি ও মজুরি ব্যাবস্থাপনার ওপর বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ কৃষি অর্থনীতিবিদদের।
বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমশক্তি দেশের ফসল উৎপাদন, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িত। রোপণ, কাটাই, মারাই ও ঝাড়াইসহ ফসল উৎপাদনের ২১টি ধাপের ১৭টিতেই সরাসরি অংশগ্রহণ করেন নারীরা। কিন্তু এত পরিসংখ্যান থাকার পরও এখনও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি নেই নারীর। শুধু তাই নয়, মজুরির ক্ষেত্রেও ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হন নারীরা।
নারী কৃষকরা জানান, পুরুষরা ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পায়। আর নারীরা পায় ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকা। তাছাড়া নাস্তাওতাদের দেয়া হয় না। চারা রোপণ করি, ধান কাটি তারপরও আড়াইশো টাকা দেয়া হয় তাদের।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন টেকসই কৃষিব্যবস্থায় নারীর ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিছুক্ষেত্রে তা পুরুষের চেয়েও অনেক বেশি এবং ক্রমেই তা বৃদ্ধি পাবে। এমন অবস্থায় নারী কৃষকদের স্বীকৃতি ও মজুরি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, পুরুষ কৃষকরা যেই বেতন পায়, নারী কৃষকরাও সেই বেতন পাওয়ার যোগ্যতা আছে। তারা একই ধরনের কাজ করে। সুতরাং বেতনের খুব বড় বৈষম্য থাকা উচিত নয়। আদিকাল থেকেই নারীদের কৃষি কাজে অংশগ্রহণ আছে এবং এটি বর্তমানে বাড়ছে। কিন্তু কৃষক হিসেবে নারীরা স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এখন যেহেতু কৃষি কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে সেহেতু তাদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া আমাদের কর্তব্য।
সরকারের কৃষিতথ্য সার্ভিসের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, নারীরা ফসলের মাঠে যে শ্রম দেন, তার ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশের জন্য তারা কোনো পারিশ্রমিক পায় না। আর বাকি ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশের জন্য যে পারিশ্রমিক পান, তা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম।