নুরুন্নাহার মুন্নির এক গুচ্ছ কবিতা
সংক্রান্তিকাল
সেই ছবিটার কথা মনে হয়
যখন সংবেদনশীল আমার আঙুলগুলো নড়েচড়ে উঠল
গন্ধহীন ,অরুচির বয়াম করোনার ঢেকুর তুললো
একটি রথ টানা শক্তি ভর করল আমার দেহে
কিছু পবিত্র ভূমির কথা মনে হলো
আবার বাদামী কেঁচোর মতো জৈবক্রিয়া শুরু করলাম
বিকেলের ত্রয়ী স্বপ্নগুলো আলোর মতো
ছড়িয়ে পড়ল বিছানো ঘাসের উপর
মৃত্যুর হাতছানি পেরিয়ে
আমি আবার মানচিত্র আঁকলাম মাটির খাতায়
পাহাড় সংক্রান্তিকালে মহামারির ঘরে
আলোর চিহ্ণ ফেলে আসি।
দ্বৈরথি আবাদী অক্ষরগুলো
আমার উন্মুক্ততা সবুজের দিগন্ত সমান
অপার সৌন্দর্যের মাঠ আটকে আছে
বিষণ্ন চার্জশিটে
লড়াকু ঝর্নার মতো চঞ্চল বাহু তার
অভদ্র চাহনিতে ঝুলন্ত জলপাই
লালন মুর্শিদির গানে অর্ধনগ্ন বৈঠক
ফেরানো যায় না তাকে আর
আগুনরোদের মলয়ে
তাই পাখিদের গানে ফিরে আসে মানবিক স্রোত
দ্রোহ স্বাধীনতায় অক্সিজেনের সুখ দহন
নিস্তব্ধ পরিযায়ী পাখির মতো বছর খানেক তাই
আমি বসে থাকি নিশ্চুপ।
খোলস
চারদিকে গিরগিটির অগণিত আনাগোনা
মানুষ মানুষকে নিক্ষেপ করে মারকুপে
লাঞ্ছিত পৃথিবী প্রয়োজন শেষে ঠেলে দেয় ভাগাড়ে
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় শিশুরাই ভুলে গেছে খেলা
চেতনার বুকে বিষ
মার্কুইস মিশাইল ললিপপের আকারে ঘুরে বেড়ায়
উদার উন্নয়নে এদেশের মানুষ এখনও অবুঝ
আপাদমস্তক ঢেকে দেয়া স্বাধীনতা-বালতিতে ধুয়ে জল খায়
বিনিময়ে প্রতিবেশী থেকে ও বেশ কৃপণ।
অপার শস্যদানা খেয়ে যে পাখি ঘরে ফেরে
সেও কৃতজ্ঞ গুণে ভরা মৌসুমে আবার জন্মায়
কিন্তু মানুষ জন্মায় না।
পশু হয়ে ঘুরে বেড়ায়, এপাড়ায় ওপাড়ায়
সুবর্ণ সুযোগে গেঁথে দেয় হিংস্রতর নখর।
মায়া পৃথিবী
তোমাকে ছুঁয়ে দেখবনা বলে
নিশ্চিন্তে সংসার পেতেছো তুমি
অথচ ভীষণ কৃপণ আঙুলে তোমাকে
ছুঁয়ে যাই রোজ বাড়ন্ত বেলায়
বিশ্বাস নেই সূর্যের উপর
কখনও পুড়িয়ে দেয় ঝাঁজ সংগ্রামে
কখনও আড়ালে থাকে নটরাজ
তাই বলে! জং ধরা নিয়ম যে স্বভাবে ক্রুদ্ধ!
অতিরঞ্জন বলে কিছ্ইু থাকে না
তবুও রেডিয়েশান গিলে
তোমার পাতাতে গড়ি বাগান
আইলেশের অসাড়তা বধ করে ছুঁয়ে যাই
তোমার সংবেদনশীল নগরী।
কথা জমুক
কথারা নাকি আজকাল গন্তব্য হারিয়েছে!
একাল-ওকাল-মধ্যকাল
সম্পর্কের এপিডার্মিসে আজকাল কথারা নাকি বসন্ত নামায় না!
রং নাম্বারটা এখন রাষ্ট্রের নাগরিক দায়িত্ব পালন করে
কথারা এখন ক্লান্ত
শরীরের উত্তপ্ত শিরাগুলো বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দেয়
কথাদের শরীরে অনিচ্ছার পোকারা হুল ফোটায়
কষ্টের ক্ষত বেয়ে রক্তাক্ত পুঁজ গড়িয়ে পড়ে
বুঝলাম……..
কথারা এখন প্রেমহীন নিরেট বোহেমিয়ান।
পোড়া ক্ষত
কষ্টপোড়া আগুন-
উত্তাপ ছড়াতে ছড়াতে ক্লান্ত হয়ে নুয়ে পড়ে
ভেতর জমা আগুন অক্সিজেন নিয়ে নেয়
মাটি পোড়ে,গাছ পোড়ে
ঘুমন্ত মানুষের নিঃশ্বাস পোড়ে
পুড়ে যায় ইট পাথরের যৌবন
আবার শিলাবৃষ্টি হয়
লতাপাতারা বাড়াবাড়ি রকমেই
শুভ্রতায় শুরু করে আলিঙ্গন
বীজশূন্য ধানের শীষগুলো তাকিয়ে থাকে
অঙ্কুরোদিত হয়না শূণ্যতায়
ভালোবাসার নকশিকাঁথায় সূইঁফোড় চলে দুর্দান্ত
কিন্তু সুখের শালুক ফোটেনা।