Search
Close this search box.

মৌলভীবাজারে ৫০ শতাংশ জমি কিনে আস্তানা গড়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’: সিটিটিসি প্রধান

মৌলভীবাজারে ৫০ শতাংশ জমি কিনে আস্তানা গড়ে তোলে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জন সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ এবং প্রস্তুতির জন্য গৃহত্যাগ করে। জানা গেছে, কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী জামিল কুলাউড়া থানার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। পরে সেখানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়।

শনিবার (১২ আগস্ট) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন হিলসাইড’ পরিচালনা করে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে চারজন পুরুষ এবং ছয়জন নারীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

অভিযানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, ছুরি-রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, কমান্ডো রুট, পাঞ্চিং ব্যাগ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সামগ্রী, উগ্রবাদী বই, নগদ অর্থ এবং স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়।

রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কথিত এই ইমাম মাহমুদ, ইমাম মাহাদীর অগ্রবর্তী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা বিশ্বাস করে– বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে ইমাম মাহাদীর পূর্ব যে ‘দুর্বল প্রকৃতির’ ব্যক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে, তাদের নেতা ইমাম মাহমুদ সেই ব্যক্তি। আর এই কথিত ইমাম মাহমুদ ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদে নেতৃত্ব দেবেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তাররা জানায়, কথিত ইমাম মাহমুদ তাদের বলেন– যারা এই জিহাদে অংশগ্রহণ করবেন তারা পরকালে পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন। জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের প্রথম ধাপ হলো গৃহত্যাগ তথা হিজরত। তাই জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার জন্য তারা ঘটনাস্থলে মিলিত হয়েছিলেন। জামিল নামক কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী কুলাউড়া থানার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। সেখানেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছিলেন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যশোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকদের পরিবারসহ এবং পরিবার ছাড়া নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তথ্য পেয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসি। এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা এলাকা থেকে ডা. সোহেল তানজীম রানা, যশোর থেকে ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম, জামালপুর থেকে এরশাদুজ্জামান শাহিনসহ আরও অনেকের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানের একপর্যায়ে গত ৭ আগস্ট রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে কথিত হিজরতের মাধ্যমে সপরিবারে গৃহত্যাগ করে আসা ছয়জন নারী, চারজন পুরুষসহ মোট ১০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি টিম। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা আট শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা মোট ছয়টি পরিবার হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করেছে। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের মধ্যে মেহেরপুর থেকে হিজরতকারী পাঁচটি পরিবার এবং ঝিনাইদহ থেকে হিজরতকারী একটি পরিবার ছিল।

গত ১২ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই গ্রুপের আরও এক সদস্য মো. ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। গ্রেপ্তার ফরহাদ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানা এলাকায় একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে তার বেশ কিছু অনুসারী আস্তানা স্থাপন করেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ‘অপারেশন হিলসাইড’ চালিয়ে শিশুসহ চারজন পুরুষ এবং ছয়জন নারীসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করি।

আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।

সংগঠনের নাম কি– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইমাম মাহমুদের কাফেলা। ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামেই তারা লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আরও বলা হয়, ইমাম মাহাদীর আগমনের পূর্বে যে ইমাম মাহমুদের কথা বলা হচ্ছে, তিনিই সেই ইমাম মাহমুদ।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা সক্রিয় হচ্ছে কি না? তাদের কোনো নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি, তাদের কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ইমাম মাহমুদ বলে যে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন, তিনি সহ এই সংগঠনের অন্য সদস্যরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। গ্রেপ্তার করা গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

আস্তানাটি কতদিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল– জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, দুই মাস আগে রাস্তাটি স্থাপন করা হয়েছিল। আস্তানা তৈরি করার জন্য ৫০ শতক জায়গা কেনা হয়েছিল। যার নামে ওই জমির দলিল করা হয়েছিল সেই দলিল গ্রহীতার নামও আমরা পেয়েছি। তবে কত টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়েছিল সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তাদের সদস্যদের জিহাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন ছিল, সব কিছুই ওখান থেকে পরিচালনা করা হতো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ