মোংলায় হঠাৎ করে জেঁকে বসেছে ঘন কুয়াশা। এতে বড় সমস্যায় সৃষ্টি হয় রাস্তাঘাটে গাড়ী চলাচল ও নদীতে খেয়া নৌকা পারাপারে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ভোর থেকেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে মোংলাসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা। গত রাত থেকে আকস্মিক ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এ উপকূলীয় এলাকা। ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের আলোও। তাই যানবাহন চলতে দেখা গেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।
এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ৮টার পর থেকে সূর্য আলো ছড়ালেও তাতের বকাশ মেঘ-কুয়ায়াচ্ছন্ন। মুলত এখন বর্ষাকাল হলেও শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে কুয়াশা। মঙ্গলবার ২৫ আশ্বিন, এখন বর্ষাকাল চলছে। এছাড়া কার্তিক মাসেও প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমেই এবার আগাম শীতের আমেজ পড়তে শুরু করেছে। মূলত অগ্রহায়ণে গিয়ে শীত পড়তে শুরু করলেও প্রায় দুই মাস আগেই শীতের কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে সাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলায়।
পৌর শহরের বান্দাঘাটা এলাকার বাসিন্দা মোঃ জহির বলেন, দেশের ষড়ঋতু এখন আর ঠিক নেই, কেমন যেন বৈচিত্র্যময় হয়ে গেছে। কারণ গরমের মধ্যে শীত, শীতের মধ্যে বৃষ্টি, বৃষ্টির মৌসুমে কুয়াশা পড়ছে। আর মঙ্গলবার ভোরে প্রচন্ড কুয়াশা, সকাল ৭টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি।
শেলাবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ কামাল হোসেন বলেন, এখন তো বর্ষাকাল কিন্ত সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে প্রচন্ড কুয়াশা পড়েছে, মনে হচ্ছে যেন শীতকাল এখন। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আছে তারমধ্যে আবার ভ্যাপসা গরমও। এমন প্রকৃতিতে মানুষ বিরক্তই হচ্ছেন।
শহরতলীর মালগাজীর বাসিন্দা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ভোরের কুয়াশায় রাস্তায় চলাচলে কষ্ট হচ্ছে, গাড়ীগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আর বেশি ভোগান্তী হচ্ছে নদীর খেয়া পারাপারে।
ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন ঘটায় এখন গমর, শীত ও বর্ষাকাল পরিলক্ষিত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে দেশ থেকে বাকী তিন ঋতু বিলুপ্তি হয়ে গেছে। ফলে বর্ষাকালে শীত, শীতকালে বর্ষা, গরমও দিন দিন বাড়ছে। বৃষ্টির মৌসুমে শীতের কুয়াশায় মাঠের ফসলের ক্ষতিসহ মানুষের মাঝেও নানা রোগবালাইলের প্রাদুর্ভাবের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, অসময়ে কুয়াশার কারণে মাঠের ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ঘটতে পারে। এছাড়া নরম সবজি হিসেবে আলু, পুঁইশাক ও টমটোতে পচন ধরা রোগ দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ লায়ন ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, মুলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেই ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন, পরিবেশ ও প্রকৃতিতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহীন বলেন, রাতের-ভোরের কুয়াশায় ঠাণ্ডা ও দিনের বেলার গরমের ঘাম বসে শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট বাড়ার আশংকা রয়েছে।