সবার ভেতরই আফসোস। পিঠা উৎসবটা যদি আরও কয়েকদিনের জন্য হতো। কতোই না ভালো হতো।
মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার চৌধুরী ফাতেমা বেগম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত পিঠা উৎসব যেন বর্ণিল রংয়ে মেতে উঠে শুক্রবার।
গভীর রাত পর্যন্ত ছিল প্রচণ্ড ভিড়। পিঠা উৎসবে বিভিন্ন স্টলে ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পিঠার বিশাল সমারোহ।
নৌকা, কাঁটা পিঠা, পাটি সাপটা, ঝুরি পিঠা, ঠোস পিটা, দুধপুলি, ভাঁপাপিঠা, সইপিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা খেতে নারী, পুরুষ ও শিশুদের ভিড় ছিল প্রতিটি স্টলে।
উৎসবকে ঘিরে এছাড়াও হারিয়ে যাওয়া পালকি, ঢেকি, চালনাসহ হরেক রকমের আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতোন।
পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি।
সরেজমিন জানা যায়, শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে শিবচর পৌরসভার চৌধুরী ফাতেমা বেগম অডিটোরিয়ামে ১দিনের গ্রামীণ ঐতিহ্য পিঠা উৎসবের আয়োজন করে উপজেলা ডায়াবেটিক সমিতি।
উৎসবে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৩৩টি পিঠার স্টল অংশ নেয়। স্টলগুলোতে, পাটি সাপটা, ঝুরি পিঠা, ঠোস পিটা, দুধপুলি, ভাঁপাপিঠা, সইপিঠা, চিতই, দুধ চিতই, আপেল পিঠা, নৌকা পিঠা, ঝুড়ি পিঠাসহ দেশীয় নানা ধরনের পিঠার বাহারি সমাহার দেখা গেছে।
দুপুরের পর থেকেই গ্রামীণ ঐতিহ্যেও এই আয়োজন দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থী পিঠা উৎসবে আসতে শুরু করে।
বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে পিঠা খেতে দেখা গেছে অসংখ্য দর্শনার্থীদের। চলে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রির ধুম।
পিঠা উৎসব উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি, চিফ হুইপের সহধর্মিনী জিনাত পারভীন চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, ডায়াবেটিক সমিতির চেয়ারম্যান রাজিয়া চৌধুরী, মেয়র মো. আওলাদ হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সেলিম প্রমুখ ।
পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানে চীফ হুইপের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অল্প মূল্যে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পিঠা কিনতে পেরে খুশি স্থানীয়রা।
এছাড়াও চুড়ি, শাল, কসমেটিকসসহ নানান পণ্য মিলে এখানে। চলে বাউল গান। ছিল হারিয়ে যেতে বসা ঢেকি,পালকি, গ্রামীণ ঘরসহ বিলুপ্ত হতে যাওয়া অনেক জিনিসের সমারোহ।
এ বছরের মতো প্রতি বছর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব আয়োজনের দাবি স্থানীয়দের।
দর্শনার্থী রাবেয়া আক্তার বলেন, পিঠার যে এতো ধরন হতে পারে এখানে না আসলে জানতামই না। আমি খুবই মুগ্ধ এখানে এসে পিঠা খেয়ে। বাসার জন্যও নিয়েছি।
চাকরিজীবী হরেন সরকার বলেন, এখানে এসে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হরেক রকমের পিঠা দেখে খুব ভালো লাগলো। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হরেক রকমের পিঠা খেলাম। আয়োজকদের কাছে আমার একটাই দাবি যেন গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর এমন পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
শিবচর ডায়াবেটিক সমিতির চেয়ারম্যান রাজিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন রকমের পিঠা ছাড়াও গ্রামীণ ঐতিহ্য চুড়ি, মাটির হাড়িসহ মাটির জিনিসপত্র, পালকি, ঢেঁকিসহ বিভিন্ন জিনিস রয়েছে।
স্টলগুলোতে ঘুরে দেখেছি এখানে ৪২ প্রকারের পিঠা রয়েছে। প্রতিটি স্টলের নামকরণ এক একটি পিঠার নামে করা হয়েছে। কারণ দর্শনার্থীরা যাতে একবার হলেও পিঠার নামগুলো পড়ে। তাহলে অন্তত আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পিঠার নামগুলো তারা জানতে পারবে।
এখানে পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পিঠার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মানুষ যে ধরনের পিঠা করে যেমন একটু ফিউশন করে তৈরি পিঠাও রয়েছে। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ খুব খুশি। আমরাও খুশি। প্রতি বছরই শিবচরে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হবে।