Search
Close this search box.

ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর রাঙামাটি

রাঙামাটি প্রতিনিধি: হ্রদ পাহাড় আর মেঘের শহর রাঙামাটি। ঋতু ভেদে প্রকৃতির এই রূপ দেখতে সারা বছর হাজারো পর্যটকের আগমন ঘটে রাঙামাটিতে। বর্ষা যেন রাঙামাটির এই রূপকে বাড়িয়ে তুলে বহুগুণে। এবারের পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট রাঙামাটি। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে বর্ষায় প্রাণ ফিরে পাওয়া প্রকৃতির কাছে নিজেদের সঁপে দিতে হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙামাটিতে ছুটে এসেছেন হাজারো পর্যটক।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক হলিডে রিসোর্টসহ সকল পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকের সরব পদচারণা। ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু এখন পর্যটকের পদচারণায় মুখর। ঈদের ছুটিতে রাঙামাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঝুলন্ত সেতুতে ভিড় করেছে পর্যটকরা। সেখান থেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌ বিহারের জন্য বোট ভাড়া করে হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করছে তারা। অনেকেই দল বেঁধে আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যান্ত্রিক শহরের কোলাহল ভেঙে নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।

এদিকে, বৃষ্টির ফলে সতেজ হয়ে উঠেছে রাঙামাটির প্রকৃতি। প্রাণ ফিরে পেয়েছে শুকিয়ে যাওয়া ঝর্ণাগুলো। সুবলং ঝর্ণা, ঘাগড়া ঝর্ণা, ধুপপানি ঝর্ণাসহ বেশকিছু ঝর্ণাতে এখন প্রচুর পানি রয়েছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে আকষর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই ঝর্ণাগুলো।

রাঙামাটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস গাইডের স্বত্ত্বাধিকারী বাপ্পী বড়ুয়া বলেন, আমাদের কাছে বেশ ভালোই পর্যটকদের বুকিং রয়েছে। বেশিরভাগ পর্যটকই সুবলং ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আগ্রহী। আমরাও তাদের সুবলং ঝর্ণাসহ বেশ কয়েকটি ঝর্ণায় নিয়ে যাচ্ছি।

গাজীপুর থেকে বেড়াতে আসা সীমান্ত-বিথী পর্যটক দম্পতি বলেন, ঈদের সময় একটু লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে আসলাম। আগে কখনও আসা হয়নি। প্রথমবার রাঙামাটির সৌন্দর্য দেখে সত্যিই মুগ্ধ আমরা।

চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক সিরাজুল মোস্তফা বলেন, মূলত সুবলং ঝর্ণাতে যাবো, সেটি লক্ষ্য রেখেই রাঙামাটিতে এসেছিলাম। সুবলং ঝর্ণা ঘুরে এসে বেশ ভালো লাগছে। প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধতা রাঙামাটি আসলেই উপভোগ করা সম্ভব।

পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে নৌ-ভ্রমণ। তাই বেশিরভাগ পর্যটকই সকাল থেকে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ছেন কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে। ঝুলন্ত সেতু পর্যটক ঘাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট-বড় অনেকগুলো ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। পর্যটকরা বোট নিয়ে সুবলং ঝর্ণা কাপ্তাইয়ের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।

পর্যটন নৌ-যান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটির কথা মাথায় রেখে আমরা আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম বিপুল পর্যটক সমাগম হবে। পর্যটকরা এসেছেন, তবে আশানুরূপ নয়। তবে পর্যটকরা নৌ ভ্রমণে যাচ্ছেন, আমরাও তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এদিকে ভিড় দেখা গেছে পলওয়েল পার্কেও। পার্কের গেট থেকে একেবারের শেষ পর্যন্ত পর্যটকে ভরপুর। পর্যটকরা পার্কের ভেতরে থাকা বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টয় ট্রেন ও দোলনাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পলওয়েল পার্কের মিনি ঝুলন্ত সেতুতেও কেউ কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হ্রদের শান্ত জল ও সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত পর্যটকরা।

শহরের প্রায় অধিকাংশ হোটেল মোটেলেই পর্যটকদের বুকিং রয়েছে। হোটেল মতি মহলের ব্যবস্থাপক চন্দন কুমার বর্মন বলেন, ঈদের ছুটিতে বেশ পর্যটক হবে সেটি আমরা ধারণা করেছিলাম। মোটামুটি পর্যটক হয়েছে, আরও কিছু বুকিং হবে আজ।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের কাউন্টার ইনচার্জ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এবারের ছুটিতে বেশ ভালো পর্যটক সমাগম হয়েছে। আমাদের হোটেল এবং কটেজগুলো শতভাগ বুকিং রয়েছে। ঝুলন্ত সেতুতেও বেশ ভালোই ভিড় রয়েছে। আশা রাখছি শনিবার পর্যন্ত পর্যটক আগমন অব্যাহত থাকবে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙামাটি জোনের উপ-পরিদর্শক আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বুধবার এবং আজ মিলিয়ে রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের ফোর্স মোতায়েন করা আছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে যেতে পারে সেই বিষয়ে আমরা তৎপর আছি।

এ বছর ঈদের ছুটিতে ৩০ হাজার পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণের আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ