কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: চলছে কার্তিক মাস। প্রকৃতি শীতের আগমনী বার্তা জানান দিতে শুরু করেছে। শহরে শীতের প্রভাব না পড়লেও গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যা হলেই শীত অনুভূতি হয়। দেখা মিলছে কুয়াশার। শীতের সকালের শিশিরেও। তবে অগ্রহায়ণের শুরুতেই বাড়বে শীতের তীব্রতা।
শীত শুরু হতেই গ্রামীণ জনপদের মাঠে ময়দানে, রাস্তাঘাটে খেজুর গাছে দেখা মেলে গাছির। একজন গাছি খেজুর গাছকে সুন্দর করে পরিষ্কার করে গাছের বুক চিরে রস বের করে। সুস্বাদু এই রসের চাহিদা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচেতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শীত যত বাড়ে খেজুর রসের চাহিদাও ততো বাড়ে। আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুর রস দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠা পায়েস।
কুষ্টিয়ার শহরের পাশেই জগতি ফুলবাড়ী মাঠপাড়া এলাকায় পারভেজ ও তার তিনজন কর্মচারী খেজুরের রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই এলাকার মসজিদের নিয়ন্ত্রনে বেশ কয়েক বছর ধরেই খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছরেও আগাম খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন তিনি।
প্রতিদিন ৮০টি খেজুর গাছ কাটেন। গড়ে প্রতিদিন ২০ হাড়ি রস হয়। প্রতি হাড়ি রসের মূল্য ৪০০/৫০০ টাকা। সেখানে রয়েছে ৬শতটির অধিক খেজুর গাছ। প্রতি শীত মৌসুমে লিজ বাবদ এলাকার মসজিদ কমিটিকে দিতে হয় ১,৩০,০০০ টাকা। লিটন, ফরহাদ ও নুর ইসলাম নামে তিনজন কর্মচারী রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ১৫০০০/১৬০০০ টাকা করে।
কর্মচারীরা জানান, বাংলা কার্তিক মাসের ১৫ তারিখ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। শীতকালীন পুরো সময়টাই খেজুরের রস, গুড় ও খেজুরের পাটালি প্রস্তুত করতে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় খেজুরের রস পাওয়া যায় এখানে। খেঁজুরের রস দিয়ে ফিন্নি ও পায়েস তৈরি করা হয়, এছাড়াও রস ও গুড় দিয়ে বিভিন্ন শীতকালীন পিঠা তৈরি করা হয়। যে জন্য সকাল-সন্ধ্যায় অরজিনাল খেজুরের রস সংগ্রহ করতে প্রতিদিন শত শত লোক এখানে ভিড় করে।
রাস্তার দুই ধারে সারি সারি খেজুর গাছ এই গাছ হতে রস সংগ্রহ চলছে। খেঁজুরের রস শরীর আর মনও চনমনে রাখে। খেজুরের রসে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ফলে রক্তস্বল্পতা দূর করতেও ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। তবে অ্যানিমিয়ার সমস্যা থাকলে প্রতিদিন এক টুকরো পাটালি গুড় বা ঝোলা গুড় খেলে খুব ভাল কাজ হয়। খেজুরের রস শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। শীতকালের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন অনেকে। কেউ আবার এ রসকে প্রক্রিয়াজাত করে পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সারা বছর খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালের খেঁজুরের রসই বেশি সুস্বাদু।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যাকালীন রস খেতে কুষ্টিয়া শহর ও আশ পাশের উপজেলা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে সমাগম হয়েছে। তারা রস খাচ্ছে এবং ক্রয় করে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে বিক্রি চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে সকালের বেশীর ভাগ রস দিয়ে উক্ত স্থানেই গুড় ও পাটালি তৈরী করছেন গাছীরা।