গোবিন্দগঞ্জে জমি দখল ও বাড়ীতে অগ্নি সংযোগের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

আজ ২১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১ টায় ১৭টি ভূমি ও মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বক্তারা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় গত ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ সকালে আাদিবাসীদের ভোগদখলীয় জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার লোকদের দ্বারা মাটি ভরাটকে কেন্দ্র করে একজন আদিবাসী নারীকে মারধর ও ঐদিন রাতে তার বাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

উক্ত ঘটনায় নাগরিক সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ের ভ‚মি ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ গত সপ্তাহে সরেজমিনে ঘটনার তথ্যানুসন্ধানের জন্য সেখানে যান।

তাদের সেই সব তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি দখল ও বাড়ীতে অগ্নি সংযোগের প্রতিবাদ এবং দোষীদের শাস্তির দাবীতে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হল (৩য় তলা)-এ এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা অবিলম্বে সকল আসামীকে প্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সেই সাথে প্রশাসনের প্রতি বিশেষ করে পুলিশ প্রসাশনের প্রতি আদিবাসীদের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বা তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পুশিল প্রশাসনকে দৃশ্যমান কিছু ফলাফল দেখাতে হবে। তাই অতিদ্রুত অন্যান্য আসামীদের প্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আদিবাসীদের ভুমির সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি প্রসাশন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া গাইবান্দার জেলা প্রশাসক প্রতিনিধি দলের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং আদিবাসী বিদ্বেষী মন্তব্য করার জন্য তার অপসরনেরও দাবি তুলেছেন বক্তারা। তারা আরো বলেন জেলাপ্রশাসকের মাথায় আদিবাসীদের জমিতে ইপিজেড করার ভুত চেপে আছে। এটি কখনই সম্ভব নয়। পূর্ববর্তী রেজিমের পুনরাবৃত্তি কখনও সম্ভব হবে না বলে সাবধান করেন।

 

এই সকল বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে যে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়, তা হলো-

 

১। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় গত ৩ জানুয়ারি,২০২৫ ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশকে তদন্ত করতে হবে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মের সাঁওতাল পল্লীতে আক্রমনের কারণে পুলিশের উপর আস্থাহীনতা সিৃষ্টি হয়েছে। তাই তা ফিরিয়ে আনার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অতীব জরুরী।

২। সাঁওতাল নারীদের মারধর শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চেয়ারম্যান ও তাঁর সাথে সম্পৃক্ত সকল অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দ্রæত নিশ্চিত করতে হবে।

৩। চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের জোরপূর্বক সাঁওতাল আদিবাসীদের জমি দখলকে কেন্দ্র করে হত্যার উদ্দেশ্যে রাতের বেলায় সাঁওতাল বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

৪। রাজাহার ইউনিয়রন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে রফিকুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে।

৫। সাঁওতালদের পৈতৃক জমি চেয়ারম্যান থেকে উদ্ধার করে সাওতালদের তা ফিরিয়ে দিতে হবে। চেয়ারম্যানের অবৈধ দখলে রাখা খাস পুকুর উদ্ধার করে সাঁওতাল আদিবাসীদের লিজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। সাঁওতাল আদিবাসীদের কবর স্থান উদ্ধার করে তাদের ফিরিয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কবর স্থান রক্ষনাবেক্ষণের জন্য স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করতে হবে।

৭। গাইবান্ধার বর্তমান জেলা প্রশাসক সাঁওতাল আদিবাসীদের প্রতি যে বিদ্বেষমূলক আচরণ প্রদর্শণ, ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন এবং রাষ্ট্রীয় নীতির তোয়াক্কা না করে ৪ ফসলী জমিতে ইপিজেড করার চক্রান্তে লিপ্ত হবার জন্য অবিলম্বে তাকে অপসারণ করতে হবে।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে এএলআরডি-র ম্যানেজার অ্যাড. রফিক আহমেদ সিরাজী তথ্যানুসন্ধানের লিখিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

বিশিষ্টজনদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, লেখক-

গবেষক পাভেল পার্থ, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এসএম রেজাউল করিম, কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরন মিত্র চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক সংস্থাসমূহ

এএলআরডি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরাম, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নিজেরা করি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বাগদাফার্ম ভুমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি ঐক্য পরিষদ, পিইউপি, রোপ, স্বপ্ন, পেইস্ট, ছিন্নমূল, পল্লী উন্নয়ন অগ্রগতি, নিত্যবিকাশ কেন্দ্র ও তরণী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ