ডেস্ক প্রতিবেদনঃ
সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুত কমে আসছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে খাদ্যের মজুত ২০ লাখ টনের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। দেড় মাসের ব্যবধানে সেই মজুত ১৪ লাখ টনে নেমে এনেছে।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খুব একটা চাল আমদানি হচ্ছে না। এদিকে অতি দরিদ্রদের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) এবং সারা দেশে খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএস কার্যক্রম পুরোদমে চলায় খাদ্য মজুত কমেছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৪ লাখ টন পর্যায় মজুত। বেসরকারি পর্যায়েও দেশে প্রচুর ধান-চাল মজুত আছে। বেশ কিছুদিন ধরে চালের দাম স্থিতিশীল আছে। বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে কয়েক দিন পর; চলবে আগস্ট পর্যন্ত। খাদ্যের মজুত ফের বাড়বে।’
চালের দাম বাড়বে না। বোরোর ভরা মৌসুম শুরু হলে উল্টো কমবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মন্ত্রী।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বুধবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস এই একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে। গত এক-দেড় মাস একই দামে এই চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে এক বছরে বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দেশে মোট খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ১ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত হচ্ছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন। গম ১ লাখ ৪৭ হাজার; আর ধান ৪৬ হাজার টন।
‘বর্তমান মজুত সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে ৬ লাখ ৫০ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১১ লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ২৭ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা।
চাল ও আটার দাম লাগামের মধ্যে রাখতে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্যসহায়তা প্রদান এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে ২০১২ সালে ওএমএস ব্যবস্থা চালু করে সরকার। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে দেশব্যাপী ডিলারদের দোকান ও খোলা ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল ও আটা কিনতে পারেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চাপে আছে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ওএমএসের আওতা বৃদ্ধি এবং দেশে খাদ্যশস্যের বাফার মজুত কিছুটা হলেও ক্রেতা-ভোক্তার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন দেশে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম জোরদার হলে বাজারে ওই পণ্যগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যার সুফল ভোক্তারা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারি গুদামে নিরাপত্তা মজুত হিসেবে অন্তত ১০ লাখ টন চাল থাকতে হয়। এর বাড়তি থাকা আরও ভালো। খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুত দিয়ে দেশে চাল ও আটার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি যেকোনো সংকট মোকাবিলা সম্ভব।’
‘রমজান মাসে সরকার এক লাখ পরিবারকে স্বল্প দামে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করে খুবই ভালো কাজ করেছে; উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, ‘এতে ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামাতে সহায়তা করেছে।’