স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ গত সপ্তাহে (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এতে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৬৪ টাকা ৪০ পয়সা। যা আগের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৫ টাকা বা ৩০ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর লাগামহীন ভাবে বেড়েছে। গত ৩৫ কর্মদিবসে (গত ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পষন্ত) ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছিল ১১৬ শতাংশ। এর মধ্যে শেষ ১২ কর্মদিবসেই ব্যাংকটির শেয়ারদর বেড়েছিল ৮০ শতাংশ। ব্যাংকটির শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোন লঙ্ঘন আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখছে ডিএসই। এরই ধারায় শেয়ারের দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ার কারণ জানে না বলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ডিএসইকে জানিয়েছিল ইসলামী ব্যাংক।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ডিএসই জানায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নোটিশ পাঠিয়েছিল ডিএসই। এর জবাবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বেড়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে ব্যাংকটির শেয়ারের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। এতে শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বেশভাল আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
তারা বলছেন, নামে বেনামে ইসলামী ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ার এখনও এস আলম গ্রুপের হাতে আছে। এতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের পরিমাণ খুবই কম। ফলে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এটির কারনে শেয়ারের দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ আগস্টের লেনদেন শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। যা গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) লেনদেন শেষে শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছিল ৭০ টাকা ৪০ পয়সা। এই গত এক মাস ১৯ দিন বা ৩৫ কর্মদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারের দর বেড়েছিল ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ১১৬ শতাংশ। আবার গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩৯ টাকা ২০ পয়সা। যেখানে গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) লেনদেন শেষে শেয়ার প্রতি দর দাঁড়ায় ৭০ টাকা ৪০ পয়সায়। মাত্র ১২ কর্মদিবসে ব্যাংকটির শেয়ারদর বেড়েছে ৮০ শতাংশ। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনশেষে শেয়ারটির দর দাঁড়ায় ৬৪ টাকা ৪০ পয়সা। যা আগের সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিনশেষে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছিল ৬৪ টাকা ৪০ পয়সা। সেই হিসেবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই ধরনের বেড়ে গেল সপ্তাহে শেয়ারটির দর গেইনারের শীর্ষে ওঠে এসেছে।
এর আগে গত বুধবার ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং অধিক পরিমাণ শেয়ার লেনদেনের কারণ ডিএসইকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নির্দেশটি দিয়ে ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছিল বিএসইসি। যা ডিএসইকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে বিএসইসি। সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. সহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ও লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। এটির পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ আছে কিনা সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানির লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কারসাজি বা অনৈতিক কোন লেনদেনের ঘটনা ঘটছে কিনা সেটিও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো।
কোম্পানিটির অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ চলতি বছরের (২০২৪ সাল) দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৯১ পয়সা। গত দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে দুই টাকা ২২ পয়সা। আলোচিত দুই প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৫৪ টাকা ৭৯ পয়সা। গত ৩১ জুন কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা ছয় পয়সা।
গত সমাপ্ত বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০২৩) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছিল তিন টাকা ৯৫ পয়সা। সমাপ্ত বছরে সমন্বিত শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ ১০ টাকা ৬৩ পয়সা। আর সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ৪৫ টাকা ২৪ পয়সা।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন দুই হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮টি। রিজার্ভে রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৪ কোটি সাত লাখ টাকা।