Search
Close this search box.

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে গ্রেফতার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী

রজব আলীকে শায়েস্তা করতে গিয়ে খুন করে জিকু

স্টাফ রিপোর্টার \ রাজধানীর নবাবপুরে রজব আলী হত্যামামলার মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকার একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ জিকু (৩২) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ
লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ

তিনি জানান, রজব আলীকে হত্যার পরপরই  আসামী জিকু মাতুয়াইল এলাকায় জনৈক মনুমিয়ার বাড়িতে আত্মগোপনে করে। দীর্ঘ আট মাস পলাতক থাকার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে তিন বছর ছয় মাস জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সে বরিশাল তার শ্বশুরবাড়ি চলে যায় এবং কোর্টে হাজিরা না দিয়ে পলাতক জীবন যাপন শুরু করে। নিজেকে মটর মেকানিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে। তার কোন এনআইডি না থাকায় সে নিজের নাম পরিবর্তন করে নাসির উদ্দিন নামে নিজেকে পরিচয় দেয়। মটর মেকানিকের কাজ জানায় সে অতি সহজেই কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারত।

সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রুটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। এজন্য যেকোন ওয়ার্কশপে তার নাম পরিচয় যাচাই না করেই চাকুরি পেয়ে যেত। এভাবে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর সে আবার ঢাকায় ফিরে আসে। সে লম্বা চুল ও দাড়ি রেখে বেশ বদল করে নাসির উদ্দিন পরিচয়ে ধোলাইখাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। পলাতক সময়ে সে তার সকল নিকট আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। তার মাদকাসক্তির পরিমান আরও বাড়তে থাকে। তার রোজগারের সমস্ত টাকাই সে মাদকের পিছনে ব্যয় করতে থাকে। এরপর তার ওয়ার্কশপের এক সহকর্মীর পরামর্শে সে মুন্সীগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়। নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ধৃত জিকুর চুল ও দাড়ি কেটে দেয়। এভাবেই তার আসল চেহারা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রকাশ পায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩  তাকে গ্রেফতার করে।

অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান,  রজব আলী  ও জিকু দুজনেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তারা দুজনেই  ছিল মাদকাসক্ত । পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করত দুজনেই। মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় রজব আলীর কাছে তাদের মাদক সেবন সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। পরবর্তীতে জামানতের টাকা ফেরত না দিয়েই তারা রজব আলীর নিকট জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবী করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

শত্রুতার জের ধরে জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে।

তিনি বলেন, গত ২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুর এলাকার একটি মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে উৎ পেতে থাকা মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়।

রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে ০৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ০১ আগস্ট ২০১৯ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। উক্ত আসামীরা সকলেই পলাতক ছিল। এছাড়াও একই রায়ে ০৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ০৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।  সে প্রায় ০৮ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ