Search
Close this search box.

বিদেশি পার্সেলে অবৈধ ডলার, মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ রিপোর্টার \ ইমিগ্রেশন অফিসার সেজে বিদেশি পার্সেল এসেছে বলে কবির হোসেন (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে গত দেড় বছরে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। সম্প্রতি ঘোর কাটে কবির হোসেনের। তিনি বুঝতে পারেন, দিনের পর দিন তার সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। অবশেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী কবির হোসেন।

এরই ভিত্তিতে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশনস অ্যান্ড অপারেশনসের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) এস এম আশরাফুল আলমের দিক নির্দেশনায় ও সহকারী পুলিশ সুপার কাজী আবু সাঈদের নেতৃত্বে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জাহিদুর রহমান নিশাদ (২৮) ও অপু আহম্মেদ (২৩)। এসময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ ও নগদ নম্বরসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ইলেট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে সিআইডির মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এসব তথ্য জানান।

কবির হোসেনের প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কবির হোসেনের ইমো নম্বরে হঠাৎ ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়- ‘স্যার আপনি কবির হোসেন বলছেন? আমি ঢাকা ইমিগ্রেশন থেকে লামিয়া বলছি। আপনার নামে একটি বিদেশি পার্সেল এসেছে। যিনি পার্সেলটি পাঠিয়েছেন তিনি কাস্টমস ফি অপরিশোধিত রেখেছেন, তাই পার্সেলটি ছাড়াতে আপনাকে কাস্টমসের ফি বাবদ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।’

পার্সেলটি নেওয়ার জন্য কবির হোসেন প্রতারক চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। পার্সেলের প্রলোভনে কবির হোসেন প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেওয়ার দু-তিন দিন পর তাকে কাস্টমস অফিসার আরেফিন পরিচয়ে ভিন্ন একজন ইমো নম্বরে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার নামে যে পার্সেলটি এসেছে সেটি আমরা স্ক্যান করে অবৈধ ইউএস ডলার পেয়েছি। আপনার নামে এখন মামলা করা হবে।

এতে ভয় পেয়ে যান কবির হোসেন। কথিত কাস্টমস অফিসার আরও বলেন, আপনি যদি মামলা খেতে না চান তবে কাস্টমস ফি বাবদ আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।’ কবির হোসেন প্রতারক চক্রের দেওয়া কয়েকটি নগদ ও বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান।

বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান আরও বলেন, কিছুদিন পর কথিত কাস্টমস অফিসার আরেফিন ইমোতে ফোন দিয়ে কবির হোসেনকে জানান, আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে আমি বিপদে পড়ে গেছি স্যার। আমি বিপদে পড়লে আপনিও বিপদে পড়ে যাবেন। এখন আপনার এবং আমার বিপদ থেকে রেহাই পেতে আরও টাকা লাগবে।

কবির হোসেন তাদের কথায় গুরুত্ব না দিলে প্রতারক চক্র কৌশলে তার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আরও টাকা চাইতে থাকে।

ই-মেইলের মাধ্যমে চক্রটি কবির হোসেনকে জানায়, অবৈধ ইউএস ডলার আনায় আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আপনি টাকা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হবে। এতে কবির হোসেন ভীত হয়ে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান প্রতারক চক্রের দেওয়া নগদ নম্বরে।

এভাবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে কবির হোসেনের কাছ থেকে চক্র ১০ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, কবির হোসেন প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন বুঝতে পেরে গত ২০ আগস্ট সাইবার পুলিশ সেন্টারে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের দুই সদস্যকে সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ডিএমপির পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ