স্টাফ রিপোর্টার- স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার বাদী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকেই প্রধান আসামি করে আদালতে দুই হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে আরও ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া।
মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন।
এসময় পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (মেট্রো সার্কেল) কাজী নাইমা হাসান উপস্থিত ছিলেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আগামী ১০ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত সাত আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন বাবুল, ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার। জামিনে আছেন এহতেশামুল। মুসা ও কালু পলাতক।
অন্যদিকে চারজনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। তারা হলেন- সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাক্কু, নুরুন্নবী, মো. রাশেদ ও আবু নাছের। এরমধ্যে রাশেদ ও নুরুন্নবী ঘটনার পরের সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
পিবিআই সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) আবু ইউসুফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে বাবুল ছাড়া আরও ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে সাক্ষী করা হয়েছে ৯৭ জনকে।
এদিকে, অভিযোগপত্র জমা দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেলের পুলিশ সুপার নাইমা হাসান বলেন, ‘আমরা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আমরা মামলাটি তদন্ত করেছি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা মামলার তদন্তভার পেয়েছিলাম। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হয়েছে।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আলোচিত মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র পেয়েছি। অনেক বড় কেস ডকেট। এটি পুরোপুরি দেখার সুযোগ হয়নি। অভিযোগপত্রে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগপত্র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আদালতে উপস্থাপিত হওয়ার পর যেহেতু এটি হত্যা মামলা, তাই বিচারকাজের জন্য অভিযোগপত্রসহ মামলার ফাইল মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাবেন। মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচারের ধাপ শুরু হবে।’
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম মহানগরের জিইসি এলাকায় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন ৬ জুন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
মোশাররফের মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে, আদালত তা গ্রহণ করেন। অন্যদিকে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ করেননি। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত শেষে সেই মামলার চার্জশিট দিলো সংস্থাটি।