মলয় বিকাশ দেবনাথ- রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনু হত্যা মামলা চলাকালে সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত তদারকি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবালিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেণু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
রবিবার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মামলার রায় ও আদেশ হওয়ার পূর্বে তথা মামলা চলাকালে সাক্ষীদের যথারীতি ও যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তদারকির জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১১২ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৩৯ (১) ধারার বিধান মতে এই রুল জারি করা হয়েছে। যা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট আদালত, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে।
গণপিটুনিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, গুজব সৃষ্টিকারী এমন যেকোনো কন্টেন্ট ফেসবুকে ছড়ানো বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। যারা এ কাজে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং গুজব ছড়ানোর পর গণপিটুনির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০২০ সালের (১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের রায়ে এ কথা বলা হয়।
সেই রাতেই রেণুর বোনের ছেলে নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে গণপিটুনিতে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আদালত মামলার প্রধান অভিযুক্ত হৃদয় ওরফে ইব্রাহিমের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালে হৃদয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একইদিন রেণুকে পিটিয়ে হত্যার আগে ‘ছেলেধরা’ গুজব সৃষ্টিকারী রিয়া খাতুনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হৃদয় ও রিয়া কারাগারে রয়েছেন। জাফর হোসেন নামের আরেক আসামিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে কারাগারে রয়েছেন।