রাকিব হাসান- মিরপুরে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাংচুর ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় নয়জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ (ডিবি) । প্রতিবন্ধী এক অটোরিকশা চালককে ট্রাফিক পুলিশ মারধর করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে এ হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাংচুর ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মোঃ জনি ইসলাম (২২), মোঃ রাসেল মিয়া (১৯), মোঃ সুরুজ (২৩), মোঃ আক্তার (৪৬), মোঃ শমসের উদ্দিন (২৪), মোঃ রনি (২৫), মোঃ কালিম (২৪), মোঃ মাসুদ রানা (২০) ও মোঃ সাম (২৬) দেরকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে মিরপুর ও পল্লবী থানা এলাকা দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত রিক্সার বিরুদ্ধেঅভিযান চালায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়।
ডিবিপ্রধান হারুন আরও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে শুক্রবার মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় কাজ করছিল ট্রাফিক পুলিশ। এসময় এক পঙ্গু ব্যক্তির ব্যাটারিচালিত রিকশা পুলিশ আটক করেছে বলে ‘ভুয়া তথ্য’ প্রচার করে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু বড় ভাই। এর জেরে সকাল ৮টার দিকে পরিকল্পিতভাবে পাঁচটি ট্রাফিক বক্সে হামলা চালানো হয়। যারা প্রত্যক্ষভাবে হামলা চালিয়েছে তাদের কেউ রিকশাচালক নন।
তিনি বলেন, মূলত পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার টার্গেট নিয়ে কয়েকজন বড় ভাইয়ের নির্দেশে এই হামলা পরিচালনা করা হয়। তাদের অন্যতম আরেকটি লক্ষ্য ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। এরই মধ্যে গ্রেফতারদের বেশ কয়েকজন বড় ভাইয়ের নাম বলেছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
শুধু মিরপুর নয়, রাজধানীর কোথাও অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, ট্রাফিক পুলিশ একজন প্রতিবন্ধী রিক্সা চালককে মারধর করেছে মর্মে অপপ্রচার চালিয়ে রিক্সা চালকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। তারই প্রেক্ষিতে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সার মালিক, চালক ও মটর ব্যাটারি ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন এই ঘটনায় ইন্ধন দেয় । এসময় কিছু উশৃঙ্খল রিক্সাচালক একত্রিত হয়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাংচুর ও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ।
এদিকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত এগারো জনকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। শনিবার পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহাদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পরে আদালত ট্রাফিক বক্সে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার মামলায় গ্রেফতার ১১ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শনিবার এ মামলায় গ্রেফতার ১১ রিকশাচালককে আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসী তাদের প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরিদর্শক (তদন্ত) আহাদ আলী আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুরের ঘটনায় ১০০ থেকে দেড়শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে শুক্রবার একটি মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলায় এগারো জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়।
কারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিদর্শক আহাদ আলী বলেন, এ ঘটনার পেছনে যারা রয়েছে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চালাচ্ছি। সব বিষয় খতিয়ে দেখে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের গ্রেফতারের মাঠে রয়েছি।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানের পর ক্ষুব্ধ রিকশাচালকেরা সেখানকার পাঁচটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করেন। হামলায় মিজানুর রহমান নামের এক পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে পল্লবীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা মূল সড়কে চলে আসায় দুটি রিকশা জব্দ করে পুলিশ। পরে চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে মিরপুরের পাঁচটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশ বক্স ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। অটোরিকশা চালকরা মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের পল্লবী জোনের কালশি ট্রাফিক পুলিশ বক্স, সাগুফতা ট্রাফিক পুলিশ বক্স, মিরপুর-১২ নম্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্স, অরিজিনাল ১০ ট্রাফিক পুলিশ বক্স এবং মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে সঙ্ঘবদ্ধ হামলা চালায়। এ সময় একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে আহত করা হয়।