স্টাফ রিপোর্টার- কাস্টমসের মালামাল হিসেবে বিমানবন্দর থেকে জব্দ করা স্বর্ণের বার বিক্রি করার কথা বলে একটি প্রতারক চক্র ১১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্রের মূলহোতা কাস্টমস পরিচালকের এপিএস হিসেবে পরিচয় দিয়ে কম দামে স্বর্ণের বার কিনে দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে।
পরে নকল স্বর্ণের বার আসল বলে কথিত কেমিস্ট ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ সেগুলো আসল বলে সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাস অর্জন করাতো। নকল স্বর্ণের বার, নকল ম্যাগনেটিক পিলার, কয়েন এবং ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ধারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. বশার মোল্লা (৫৩), শেখ সোহাগ হোসেন মিন্টু (৩৩), দ্বীন মোহাম্মদ (৪১), মো. জুয়েল শিকদার (৪৬), কথিত ড. মোজাম্মেল খান ওরফে আকাশ (৪০), শেখ আলী আকবর (৫৭), মো. জামাল ফারাজী (৫৫), মো. সোহেল শিকদার (৩০), মো. বিল্লাল হোসেন (৩২) ও মো. শাহরিয়ার ইকবাল (২৫)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে চারটি নকল সোনার বার, সোনার বার তৈরির মেশিন, তামার তার, তার গলানোর কমিক্যাল, হিউম্যান রাইটসের নকল আইডি কার্ড ও সিভিল এভিয়েশনের নকল আইডি কার্ড উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ।
সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন-দক্ষিণ) সঞ্জিত কুমার রায়।
তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ওয়ারি) বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নকল সোনার বার, নকল ম্যাগনেটিক পিলার, কয়েন এবং ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ধারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে। রবিবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা নকল সোনার বার, ম্যাগনেটিক পিলার ও কয়েন, কাস্টমসের মালামাল বিক্রির সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতার বশার মোল্লা নিজেকে কাস্টমস পরিচালকের এপিএস হিসাবে পরিচয় দিয়ে কম দামে স্বর্ণের বার কিনে দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে।
গ্রেফতারকৃত শেখ সোহাগ হোসেন মিন্টু নিজেকে কাস্টমস পরিচালক অ্যাডমিন হিসাবে ক্রেতার সঙ্গে দেখা করে বিশ্বস্ততা অর্জন করে। গ্রেফতার দ্বীন মোহাম্মদ ও জুয়েল শিকদার স্বর্ণকার হিসাবে নকল সোনার বার তৈরি করে। গ্রেফতারকৃত কথিত ড. মোজাম্মেল খান ওরফে আকাশ নিজেকে কেমিস্ট ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ পরিচয় দেয়। গ্রেফতার শেখ আলী আকবর নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর হিসেবে পরিচয় দেয়।
এছাড়া গ্রেফতার জামাল ফারাজী, সোহেল শিকদার, বিল্লাল হোসেন এবং শাহরিয়ার ইকবাল ক্রেতা যোগাড় করে পরমাণু বিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যায় এবং ম্যাগনেটিক পিলার, কয়েন ও সোনার বার পরীক্ষা করে সঠিক আছে কি না তার প্রতিবেদন দেয়।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা একেকজন একেক চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ম্যাগনেটিক পিলার, কয়েন ও সোনার বার সরবরাহ করার কথা বলে সুকৌশলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানা, দক্ষিণখান থানা, উত্তরা-পূর্ব থানা, কাশিমপুর থানা ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. তরিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আরজুনের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।