স্টাফ রিপোর্টার- শ্রী হরিদাস চন্দ্র দাস ওরফে তাওহীদ (৩৪)। বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটি ছবি এডিট করে সংযুক্ত করেন ওয়ালপেপারে। তখন থেকেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় তার ফন্দিফিকির করতে থাকেন। ২০১৯ সালে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির পরিচয় ব্যবহার করে ময়মনসিংহ এলাকায় তার প্রতারণার ভিত মজবুত করেন।
এভাবে প্রতারণা করে বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ চক্রের মূলহোতা হরিদাস ওরফে তাওহীদসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে এনএসআই ও র্যাব। সোমবার (৭ নভেম্বর) রাতে যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে, এক শ্রেণির প্রতারক চক্র স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের অথবা সমাজের বিভিন্ন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে বা তাদের প্রটোকল অফিসার বা বিভিন্ন মন্ত্রীর ভুয়া এপিএস পদ ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ করছে। এমনকি এই প্রতারক চক্র প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ভুয়া প্রটোকল অফিসার পরিচয় দিয়েও বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে।
কে এই হরিদাস ওরফে তাওহীদ?
গ্রেফতার হরিদাস ওরফে তাওহীদ প্রতারক চক্রের মূলহোতা। তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন নিয়ম অবৈধ উপায়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে তার এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করেন। তার আত্মীয়ের মাধ্যমে সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে কৌশলে একটি এতিম সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন এবং সেখানকার স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে দুই বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন মুসলমান মেয়েকে
পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশে এসে রাজধানীর উত্তরায় পুরাতন এসি কিনে মেরামত করে বিক্রির কাজ শুরু করেন। এ সময় উত্তরার একটি হাসপাতালে এসি মেরামত বা এসি প্রদানের বিষয়ে তার সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০১৮ সালে একজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে সাবলেট বাসা ভাড়া নেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তার মেয়েকে বিয়ের জন্য ২০১৯ সালে হরিদাস ধর্মান্তরিত হন। পরে নাম পরিবর্তন করে তাওহীদ ইসলাম নাম ধারণ করেন।
বিয়ের পর শ্বশুরের মাধ্যমে উত্থান যেভাবে
গ্রেফতার হরিদাস ওরফে তাওহীদ তার শ্বশুরের পরিচয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় কিছু জমি কেনেন। তার শ্বশুরের মাধ্যমে এলাকার লোকের সঙ্গে নিজেকে একজন বিত্তশালী লোক হিসেবে পরিচিত করেন। পাশাপাশি প্রচার করতে থাকেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল অফিসার। দামি গাড়ি নিয়ে ও দামি পোশাক পরে মাঝে মাঝে এলাকায় স্থানীয় রাজনীতিবিদ, গণ্যমান্য বিত্তশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হতেন ও প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের প্রস্তাব দিতেন।