Search
Close this search box.

মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সুসজ্জিত ভূয়া অফিস বানিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সহ আরো বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন ওরফে আমিনুর ছদ্মনাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বাদল (৪২)’কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) ।

শুক্রবার দিবাগত রাতে পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকার একটি বাসা থেকে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করে।

পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো: জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভুক্তভোগী মোঃ শাহজাহান (৬০ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরিজীবী। তিনি সম্প্রতি আশুলিয়ায় একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। গত ২৬ অক্টোবর একজন ব্যক্তি তার নাম সায়মান পরিচয় দিয়ে ভিকটিম মোঃ শাহজাহান এর সাথে পরিচিত হন। সে নিজেকে এসবি ইন্টারন্যাশনাল কো. লি. এ চাকরি করেন বলে দাবী করেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার নির্মানের জন্য ভিকটিমের নির্মানাধীন বিল্ডিং এর ছাদ ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের এমডি মাসুদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরবর্তীতে এমডির অফিসের স্টাফ তার নাম জাহাঙ্গীর আলম পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন।

বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম

এরপর ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে যোগাযোগ করে গত ২ নভেম্বর ঢাকার পল্লবী থানা এলাকায়  আসেন। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী জাহাঙ্গীর আলম ভিকটিমকে তাদের সুসজ্জিত অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। ওই সময় সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান এসবি ইন্টারন্যাশনাল কো. লি. এর এমডি পলাতক আসামী মাসুদুর রহমান ওরফে কামাল সহ এজাহারনামীয় অন্যান্য আসামীরা অফিস রুমে বসে ভিকটিম এর বিল্ডিং এর ছাদ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেন এবং ভিকটিম এর বাড়ীর দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ২ কপি ছবি নিয়ে অফিসে আসতে বলেন।

পরবর্তীতে ভিকটিম গত ৫ নভেম্বর পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বরে আসলে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন ভিকটিমকে তাদের ঝিলপাড়ের একটি বাড়ির অফিস কক্ষে নিয়ে যায়। ভিকটিম সেখানে যাওয়ার পরে আসামীরা ভিকটিমের সাথে তার টাওয়ার নির্মানের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা না করে কৌশলে পলাতক আসামী মাসুদুর রহমান ভিকটিমকে বলে তার বেয়াই মাহবুবুর রহমান জাপানি টয়োটা কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকরি করেন। উক্ত জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে গাড়ীর যন্ত্রাংশ তৈরি করতে সোনারগাঁও মুরগা পাড়া এলাকায় ইন্ড্রাস্টির জন্য ২.৬৫ একর জমি নিবার্চন করেছে। জমিটি আসামী মাহাবুবুর রহমান এর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে বায়না নামা দলিল করলে অধিক টাকা কোম্পানী থেকে আদায় করতে পারবেন বলে জানায়। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ভিকটিমকে বায়না নামা দলিল এর গ্রহিতা হতে প্রস্তাব করেন এবং অতিরিক্ত টাকা ভিকটিমসহ আসামীরা সমহারে বন্টন করে নিবে মর্মে ভিকটিম এর বিশ্বাস অর্জন করে এবং ভিকটিমকে অধিক বিশ্বাস অর্জন করানোর লক্ষে কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ করতে চায়। তখন ভিকটিম কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ করতে রাজি না হলে আসামী মাসুদুর রহমান এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে উপস্থিত সবাইকে ১টি আঙ্গুল গ্লাসের ভিতর পানিতে রেখে শপথ করান।

একপর্যায়ে পলাতক আসামী মাসুদুর রহমান জমির মালিক সাজিয়ে আসামী মোস্তফাকে ডাকেন। তখন আসামী মোস্তফা এসে জানায় তার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য দ্রুত সিংগাপুর মাউন্ট এ্যালিজাবেথ হাসপাতালে নিতে হবে। সেখানে চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন তার নিকট নগদ টাকা না থাকায় তিনি কম দামে জমি বিক্রি করছেন।

তখন জমির মোট মূল্য তেইশ কোটি বত্রিশ লক্ষ টাকা নির্ধারন করে বায়না বাবদ দুই কোটি  টাকা উল্লেখ করে ভিকটিম এর সাথে চুক্তি করেন। বায়না নামায় দুই কোটি  টাকা উল্লেখ করলেও জমির মালিক আসামী মোস্তফাকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়।

প্রতারক চক্রটি কৌশলে ভিকটিমের কাছ থেকে ১৫,০০,০০০/- নেয়ার প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম অধিক মুনাফা লাভের আশায় টাকা দিকে রাজি হয় এবং গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক,পল্লবী শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করে আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম এর সাথে রিক্সায় করে ওই অফিসে যায়। অফিসে যাওয়ার পর আসামীরা ভিকটিমের নিকট থেকে সু-কৌশলে পনের লক্ষ টাকা নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে আসামীরা আবারও ভিকটিমকে আরো ১০,০০,০০০/- টাকা দিতে বললে তাদের এহেন কার্যকলাপ ভিকটিম এর নিকট সন্দেহের কারন হয়। একপর্যায়ে ভিকটিম বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন উল্লেখিত সকল আসামীরা প্রত্যেকেই ভিকটিম এর নিকট ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছে প্রতারনা করছে।

এরপর ভিকটিমউক্ত গত ৯  নভেম্বর পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

পরবর্তীতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) ঢাকার সহযোগিতায় ভিকটিম শাহজাহান বাদী হয়ে উক্ত ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করেন।

ইতিপূবে পিবিআই কর্তৃক প্রতারনা মামলায় গ্রেফতারকৃতরা

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ রবিউল ইসলাম জানান উক্ত মামলার আসমী আমিনুর কে  বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত আসামীকে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামীকে ইতিপূর্বে প্রতারণার মামলায় পিবিআই গ্রেফতার করেছিল। সে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ছদ্মনাম ব্যবহার করে পুনরায় ভিন্ন ভিন্ন দলভূক্ত হয়ে বিভিন্ন কৌশলে মানুষকে প্রতারিত করছেন। সে ২০১৭ সাল থেকে এ ধরনের প্রতারনা মূলক কাজের মাধ্যেমে অসহায় সহজ সরল মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ