স্টাফ রিপোর্টার- যাত্রী সেজে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও সিএনজি ভাড়া করত তারা। এরপর চালকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে খাবারের সঙ্গে চেতনা নাশক খাইয়ে অচেতন করে যানবাহনটি ছিনিয়ে নিয়ে যেত।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার শ্যামলী পিসি কালচার এলাকা থেকে গত ২ নভেম্বর অচেতন অবস্থায় মোক্তার হোসেন (৬০) নামের এক বৃদ্ধ চালককে উদ্ধার করে পথচারীরা। পরবর্তীতে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. হাবিব হোসেন মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় খাবারের সঙ্গে চেতনা নাশক খাইয়ে রিকশা ও সিএনজি ছিনিয়ে নিয়ে আসছিলো। মামলাটি তদন্তে করতে গিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মানিক সরদার, দেলোয়ার ও ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় তাদের কাছ থেকে নিহতের মোবাইল ফোন, ছিনিয়ে নেওয়া সিএনজি ও ১৮টি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মানিক সরদার নামের এক আসামিকে সনাক্ত করা হয়। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মানিকের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত একটি সিএনজি এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাবাদে মানিকের কাছ থেকে চক্রের আন্য সদস্যদের তথ্য পাওয়া যায়। অভিযান চালিয়ে তার অপর সহযোগী দেলোয়ার ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে ৬ পাতা চেতনা নাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাদ দিয়ে হাফিজ আক্তার আরও জানান, একজন সর্দারের নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও সিএনজি চুরি করে আসছিল। ৩ থেকে ৪ জন করে দলে ভাগ হয়ে ১০ থেকে ১২টি দল বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালকদের টার্গেট করে। এরপর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে চালকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তুলে নির্জন কোন স্থানে নিয়ে যায়। আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে চালককে জুস-কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি পান করিয়ে অচেতন করে রিক্সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে রিক্সা চুরি করে সেই রিক্সা কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বিক্রি করে দেয়। প্রতিটি ব্যাটারী চালিত রিক্সা ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এ যাবৎ তারা দুই শতাধিক ব্যাটারী চালিত রিক্সা চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের নাম প্রকাশ করেছে। ঘটনায় জড়িত বাকী আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।