স্টাফ রিপোর্টার- অনলাইন প্লাটফর্মে লাইভ পর্ণ ভিডিও স্ট্রীমিং প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা ও তার আপর ৫ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-চক্রের বাংলাদেশী মূলহোতা আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানি, মোঃ আবু শামা (৪১), ফাতেমা আক্তার (২৪), শায়লা আক্তার (৩৪), শাহ আরমান (২৭) এবং মোঃ সেলিম (৩৫)। তাদেরকে গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ১১ টি মোবাইল ফোন, ১৭ টি সিম কার্ড, ২ টি ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ডেভিট কার্ড-ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন,অনলাইন প্লাটফর্মে অপরাধ প্রবনতা নিরসনে কাউন্টার টেরোরিজম এর সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ নিয়মিত সাইবার পেট্রোলিং এর মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক ভিডিও লাইভ প্লাটফর্ম “টপ ক্লাস এন্টারটেইনমেন্ট” এর মোবাইল এপ্লিকেশন “ড্রিম লাইভ” এর অনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত হয়।
পরবর্তীতে ব্যাপক অনুসন্ধান ও অনলাইন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে উক্ত অনলাইন মোবাইল এপ্লিকেশন সাইটটির মূলহোতা আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানি ও তার সহযোগীদের সনাক্ত করা হয়। গ্রেফতারকৃত আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানি সারা বাংলাদেশে ১২০ টির অধিক এজিন্সির মাধ্যমে ভিডিও লাইভ স্ট্রীমিং সাইটটি পরিচালনা করে। গ্রেফতারকৃত আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানি ও তার অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশে অননুমোদিত ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও ভার্চুয়াল গেম কয়েন অবৈধ ই-ট্রানজেকশন্ এর মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃত আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানির ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এ্যাকাউন্ট স্ট্যাটমেন্ট পর্যালোচনায় গত ৩ মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, “টপ ক্লাস এন্টারটেইনমেন্ট” অ্যাপটি ইন্ডিয়া থেকে পরিচালিত হয়। গ্রেফতারকৃত আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানি ও তার অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশে বিপুল পরিমান গ্রাহক গড়ে তোলে।এরপর ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও ভার্চুয়াল গেম কয়েন অবৈধ ই-ট্রানজেকশন্ এর মাধ্যমে গ্রাহকের নিকট বিক্রয় করে লাইভ স্ট্রিমিং জমিয়ে তোলে। তারা এই কাজে বিকাশের মাধ্যমে নগদ অর্থ লেনদেন করত। আবু মুসা ইমরান আহমেদ সানির বিকাশ থেকেই ওই ত্রিশ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।
অতিরিক্ত কমিশনার জানান, বাংলাদেশ সরকারের কঠোর পদক্ষেপের ফলে অনলাইন প্লাটফর্মে অশ্লীলতা ও পর্ণ সাইট একের পর এক বন্ধ করা হলেও সাইবার অপরাধীরা নিত্য নতুন কৌশলের মাধ্যমে তাদের অপরাধ কার্যক্রম চলমান রেখেছে। বাংলাদেশে নব্য পর্ণ ব্যবসা কৌশল হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্মে লাইভ পর্ণ ভিডিও স্ট্রীমিং পরিচালনা করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে অবৈধভাবে পাচার করে আসছিল চক্রটি।
ডিএমপির সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব আ ফ ম আল কিবরিয়া এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ নাজমুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ অহসান হাবিব এর তত্তাবধানে কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আরিফুল হোসেন তুহিন এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে ডিএমপি’র রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।