Search
Close this search box.

সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী পরিচয়ে ছিনতাই! গ্রেফতার ৩

স্টাফ রিপোর্টার- দৈনিক ভোরের চেতনার সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচয়দানকারী একজন পেশাদার ছিনতাইকারী ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির তেঁজগাও বিভাগ। তার নাম নুরুল আফছার। পেশাদার ছিনাইকারী হলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই সাংবাদিক পরিচয়ের আশ্রয় নিতেন তিনি।

দীর্ঘদিন সাংবাদিক ও মানবাধিকারের পরিচয় ব্যবহার করেই ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিলেন আফছার, পরিচালনা করতেন একটি ছিনতাই চক্রের।

আফছার চক্রকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক।

তিনি বলেন, সড়কে নিরাপদে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ছিনতাই ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির সামনে সাংবাদিক লেখা কাগজ ও পত্রিকার নামে স্টিকার ব্যবহার করতেন আফছার।

গত ৩০ নভেম্বর একই উপায়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নাগর থানার খেজুরবাগান এলাকা থেকে এক ভুক্তভোগীকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে মারধর ও বিদেশি মুদ্রাসহ কয়েক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন এ চক্রের সদস্যরা।

পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাতেই তথ্যপ্রযুক্তি ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। তাদের গ্রেফতারে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় নুরুল আফছার ও তাঁর সহযোগী আফজাল হোসেন এবং মো. মনিরুজ্জামানকে।

ডিসি আজিমুল হক বলেন, গত নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ ভোর ৬টার দিকে বিমানবন্দরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকার সংসদ সদস্যদের বাসভবনের ৩ নম্বর ভবনের বাসিন্দা অলিউর রহমান তুষার (২৭) খেজুরবাগান ক্রসিং থেকে একটি প্রাইভেট কারে ওঠেন। এ সময় প্রাইভেট কারে চালকসহ মোট চারজন যাত্রী ছিলেন। প্রাইভেট কারটি একটু সামনে গিয়ে সংসদ ভবনের ৬ নম্বর গেটে (মণিপুরিপাড়ার বিপরীতে) যাওয়ামাত্রই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা তুষারের চোখে কালো চশমা দিয়ে হাত বেঁধে ফেলেন। এরপর একটি লাঠি দিয়ে মারধর করেন।

পরে ভুক্তভোগীর পকেটে থাকা ৫ হাজার ১০০ কাতারের মুদ্রা, যা বাংলাদেশি প্রায় দেড় লাখ টাকা, নগদ টাকা ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে ভুক্তভোগীকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার থানার বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাশনাল পার্কের ফেলে দেন। পরে গত ৬ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী তুষার বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলার দায়ের করেন।

ডিসি আরও বলেন, ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও আরিচা মহাসড়কের প্রায় আড়াই শ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নান্দনিক হাউজিং নামের একটি আবাসিক এলাকায় গাড়িটি পাওয়া যায়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে গাড়িটি জব্দ ও ছিনতাইয়ে জড়িত নুরুল আফছার ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই করা দুটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের ১৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া প্রাইভেট কারের ড্যাশবোর্ডের সামনে দৈনিক ভোরের চেতনা নামক একটি পত্রিকা এবং সাদা কাগজে সাংবাদিক লেখা লেমেনিটিং করা একটি স্টিকার, ভিকটিমকে মারধর করার কাজে ব্যবহৃত লাঠি, কালো চশমা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দেওয়া আইডি কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

ডিসি জানান, গ্রেফতার নুরুল আফছার নিজেকে দৈনিক ভোরের চেতনা নামের পত্রিকার একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। মূলত ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী পরিচয়ের আইডি কার্ড, স্টিকার ইত্যাদি ব্যবহার করতেন।

প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, অপহরণ, ছিনতাইসহ মোট সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ