স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পোশাক চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানোর সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব কায়দায় গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে আসছিল একটি চক্র। এই চক্রের সাত সদস্যকে রাজধানীর ডেমরা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক সামগ্রীসহ একটি কাভার্ড ভ্যান, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও কাভার্ড ভ্যানের নাট খোলার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪ এর মিডিয়া কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে ডেমরায় অভিযান চালিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—মো. তাওহিদুল কাউছার (৪২), মো. নাজিম (৩৫), মো. মাসুদ (৩৫), মো. দুলাল (৪৫), মো. মিরাজ উদ্দিন (৩৩), আব্দুল আল মাসুদ (৩০) ও মো. সাইফুল ইসলাম (২২)।
তিনি জানান, রাজধানীর ডেমরা থানার একটি প্যাকেজিং ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২৫ হাজার পিস তৈরি পোশাক জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবকে জানিয়েছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির গার্মেন্টস মালামাল চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। চক্রের সদস্যরা কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ড ভ্যান থেকে চুরি করে স্থানীয় মার্কেটে চোরাইপথে কমদামে বিক্রি করত।
এ ধরনের কয়েকটি চক্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে বলে জানান র্যাববের ওই কর্মকর্তা ।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর শত কোটি টাকা মূল্যের দেশি পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ডাকাত চক্রটি সাধারণত কাভার্ড ভ্যানের চালকদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখাত। ডাকাতির মালামাল বিক্রির টাকার ভাগ দেওয়ার কথা বলে ড্রাইভারকে রাজি করিয়ে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নির্জন এলাকা ও চক্রের সুবিধাজনক স্থানে কাভার্ড ভ্যান পার্কিং করাত। এরপর কাভার্ড ভ্যানটিকে তাদের লোড-আনলোড পয়েন্টে নিয়ে এলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে ভ্যানের পাশের ওয়ালের স্ক্রু খুলে প্রত্যেক কার্টুনের ভেতরে থাকা মালামালের ৩০-৪০ ভাগ মালামাল রেখে আবার পূর্বের ন্যায় কার্টুন সঠিকভাবে বাধাই করে কাভার্ড ভ্যানে লোড করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যেত, যাতে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কেউই সন্দেহ না করতে পারে। ডাকাতচক্রটি কার্টুনের মালামালের ওজন ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণের মালামাল কার্টুন থেকে চুরি করে সরিয়ে রাখে, ঠিক সেই পরিমাণের ওজনের ঝুট কার্টুনের ভেতর মালামালের মাঝখানে দিয়ে কার্টুন প্যাকেট করে। ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওয়েট মেশিনে কোনো ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ত না। এ ছাড়াও মালামালসহ সম্পূর্ণ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানও মাঝে মাঝে তারা লুট করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি গার্মেন্টস মালামাল চুরি করার ফলে বিদেশি ক্রেতারা সঠিকভাবে ও সঠিকসময়ে মালামাল ডেলিভারি না পাওয়ার কারণে মালামালে মূল্য পরিশোধ করতেন না। পরবর্তীতে সেই সকল ক্রেতারা ক্রয় আদেশ দিতেন না। গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।