স্টাফ রিপোর্টার- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রবিবার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসীন ইফতেখার তার জামিন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। ৫ জানুয়ারি দুপুরে বুশরার পক্ষে জামিন শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে আদেশের জন্য অপেক্ষামান রাখেন।
পরে সন্ধ্যায় আদালত থেকে জানানো হয়, রবিবারা জামিনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে। ওইদিন জামিন আবেদনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল, আব্দুর রহমান হাওলাদার প্রমুখ।
গত ১০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর রামপুরার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন দুপুরে তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আরেকটি আদালত। গত ১৬ নভেম্বর তাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। একইদিনে পক্ষে তার পক্ষে করা জামিন আবেদন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নামঞ্জুর হয়। এরপর তার পক্ষে দায়রা আদালতে ফৌজদারি বিবিধ মামলা করেন আইনজীবী।
গত ৪ নভেম্বর রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বান্ধবী বুশরাকে বাসায় যাওয়ার জন্য এগিয়ে দেন ফারদিন। এরপর থেকেই নিখোঁজ হন ফারদিন। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত চার বছর ধরে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে ফারদিনের। ওই তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। গত ৪ নভেম্বর একসঙ্গে ঘোরাফেরার পর রাত সোয়া ১০টায় বাসায় ফিরে যান বলে পুলিশকে জানান ওই তরুণী।
এরপর গত ৯ নভেম্বর দিনগত রাতে ডিএমপির রামপুরা থানায় ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগ এনে বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর তদন্ত শেষে বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ খুন নয়, আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ঘটনার তদন্ত করে ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এটি প্রতীয়মান হয় যে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। কেন ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করছে ডিবি- তার বেশ কিছু কারণ জানায় সংস্থাটি। ভিকটিম ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিল। সবার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করতে পারত না। তার রেজাল্ট গ্রাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে ৩.১৫ তারপর কমতে কমতে ২.৬৭; যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়স্বজন কেউ জানত না । বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল, যেটা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দেয়। নিজে টিউশন করে চারটা। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালায়। নিজের জন্য কিছু করে না। তারপরও বাড়িতে শাসন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। হলে থাকা যাবে না। এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল- যেটা ভিকটিম মানতে পারেনি। ফারদিন নূর পরশের ২টা নাম্বারে বি-পার্টি ছিল সর্বমোট ৫২২টি। ওই দিন রাতে সে যেখানে যেখানে ঘুরেছে তার সেলে কোনো বি-পার্টি আমরা সার্চ করে পাই নাই একই অবস্থানে। সে যেভাবে উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয় যে, মানসিকভাবে ডিস্টার্বড ছিল। কারো সঙ্গে ওই দিন রাতে দেখা করে নাই। সে বাবুবাজার ব্রিজ টার্গেট করে। ১০:৫৩, ১১:০৯ এ সময় বাবুবাজার ব্রিজ অনেক ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত সে ওখান থেকে পিছপা হয়। তারপর নিজের সাথে নিজে কথা বলে সময় নেয়। তারপর আবার তার নিজের বাসা অতিক্রম করে ডেমরা সেতুতে যায়। শেষ গ্রামীণ নাম্বারের আইপিডিআরে তার অবস্থান সেতুর উপর অনুমান করা হয়। গ্রামীণ নাম্বারের ফোরজি সেল ১৩, ৩২, ৩৩ তার লোকেশন যেটা লেগুনা ড্রাইভার যেখানে নামিয়েছিল বলছে তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে ৩২ সেলটা ঠিক ব্রিজের ওপর দেখায়। নদীর এপার বা ওপার গেলে ৩২ সেল পাওয়া যায় না। এটাতে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বশেষ সেতুর ঠিক মাঝখানে তার অবস্থান ছিল।
এরকম একটা উদাহরণ আছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিল; আত্মহত্যার আগে সারারাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছিল। আমাদের ভিকটিমও এরকম একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। বুশরাকে রাত ৯.৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং কারো সঙ্গে দেখা করে নাই। তার গত ১ বছরের সিডিআর পর্যালোচনা করলে পূর্বে কখনো এমন দেখা যায় নাই।
ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে এবং টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথন রয়েছে; যেখানে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছে বহুবার। মুমুর ভাষ্যমতে, ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
যে ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেছেন তাদের সঙ্গে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করি। ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসে নাই। আসলে পূর্ণাঙ্গ মতামত তারা দেবেন। প্রাথমিকভাবে যেটা দিয়েছে সেখানে মাথায় আঘাতের কথা বলা আছে। কিন্তু খুবই সামান্য আঘাত যেটাতে মৃত্যু নিশ্চিত হবে না বলে মৌখিকভাবে জানান। এই আঘাতে সর্বোচ্চ অজ্ঞান হতে পারে মর্মে জানান তারা। যদিও মিডিয়ার সামনে বলে ফেলেছেন- মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলে পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উঠে আসতো। সুরতহাল রিপোর্টে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।