স্টাফ রিপোর্টার- জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তার নাম মো. কবীর আহাম্মদ। অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়ে কবির নিজেই র্যাডিক্যালাইজড হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন বলে জানিয়েছে সিটিটিসি।
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সদস্যরা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছিল । এ সংগঠনের মাস্টার মাইন্ড পলাতক শামিন মাহফুজ দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধাপে অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় কিছু দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও বিপুল পরিমান বিস্ফোরক জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অন্য দুই জঙ্গি হলেন -মো. ইয়াসিন ও আব্দুর রহমান ইমরান। তাদের কাছ থেকে তিনটি দেশীয় পিস্তল, ছয়টি একনলা বন্দুক, ১১ রাউন্ড গুলি, ১৪০ রাউন্ড সিসার তৈরি গুলি, দুই লিটার এসিড, গান পাউডার, তিন লিটার অকটেন, দুই কার্টুন ম্যাচ বক্স, এক কয়েল বৈদ্যুতিক তার, দুই বোতল দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ, দুটি স্প্রে ক্যান, একটি লোহার করাত, স্কচ টেপ ও সুপার গ্লু, প্রশিক্ষণের পোশাক ও টুপি এবং হ্যান্ডস করাত ও ব্লেড জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিরুদ্ধে সিটিটিসির চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্রগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে মো. সাইফুল ইসলাম তুহিন ও মো. নাঈম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সংগঠনের অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কবির আহাম্মদকে শনাক্ত করে সিটিটিসি। পরবর্তীতে সিটিটিসির একটি আভিযানিক দল কবির আহাম্মদকে বান্দরবান জেলা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানার বাইশারী এলাকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালায়। অভিযানে মাটির নিচে লুকায়িত অবস্থায় দুটি প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে অস্ত্র ও গোলাবারূদ উদ্ধার করা হয়।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, কবির জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন আর উদ্ধারকৃত অস্ত্রের কিছু অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কাছেও সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। তার বিরুদ্ধে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় অস্ত্র মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
কবির পুলিশকে জানিয়েছে, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মাস্টর মাইন্ড পলাতক আসামি শামিন মাহফুজ পার্বত্য এলাকায় এই সংগঠনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধাপে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কবিরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপির কদমতলী থানা এলাকা থেকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দুই সক্রিয় সদস্য মো. ইয়াসিন ও আব্দুর রহমান ইমরানকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও জানান, ইয়াসিন এবং আব্দুর রহমান ইমরান জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সক্রিয় সদস্য। তারা দুজনেই পলাতক শামিন মাহফুজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান ইমরানের মাধ্যমে শামিন মাহফুজ বিভিন্ন সময় তার সাংগঠনিক আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতেন। আর ইয়াসিন বিভিন্ন সময় শামিন মাহফুজের জন্য সেল্টার হাউজ ব্যবস্থাপনাসহ এই সংগঠনের উগ্রবাদী আদর্শে দীক্ষিত হয়ে কথিত হিজরতে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত সেল্টার হাউজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।
তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ডেমরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।