Search
Close this search box.
জেল থেকে শক্তিশালী হচ্ছে জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক

সামরিক শাখা প্রধান ছিলেন রনবীর, বোমা তৈরি ও প্রশিক্ষন দিতেন বাশার

স্টাফ রিপোর্টার- কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং থেকে গ্রেফতার নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‘র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন। তিনি চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতিও করতেন। এক পর্যায়ে ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন। এসময় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেফতার পরবর্তী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক হলেন খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, সোমবার কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসময় তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‘ এর অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান। সে ২০০৭ সালের পূর্বে পোস্ট অফিসে চাকরি করত এবং পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরবর্তীতে ডাকাতি মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করে। কারাগারে থাকাকালীন সময় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে রনবীরের পরিচয় হয় এবং সে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়াও, সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সে সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে সংগঠনের আমীরের নির্দেশনায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শূরা কমিটির মিটিংয়ের আয়োজন করে। এসকল সভায় সংগঠনের সামরিক শাখার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সিদ্বান্ত গৃহিত হয়। এছাড়াও ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সঙ্গে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালীন বৈঠকে রনবীরসহ অন্যান্য শূরা সদস্যরাও উপস্থিত ছিল এবংও ওই বৈঠকে গ্রেপ্তারকৃত রনবীর পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রুপরেখা নির্ধারণ করে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট থেকে ৪ তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় সে জড়িত ছিল। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিখোঁজ ওই ৪ তরুণকে সে সামরিক শাখায় নিযুক্ত করে। প্রায় ১ বছর পূর্বে সে সংগঠনের সামরিক শাখা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অপরটি সমতলে।

তিনি আও জানান, সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হত। সে দেশব্যাপী সংগঠনের সাথে যুক্ত সদস্যদের সামরিক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত। তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপর একজন সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তার নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হত। সে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও তদারকির জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করত। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করে এবং কিছুদিন পূর্বে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে।

এদিকে গ্রেফতারকৃত আবুল বাশার মৃধা হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা হতে পড়াশোনা করে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তার সাংগঠনিক নাম আলম। নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় আবুল বাশার এর নাম ছিল। আবুল বাশার মৃধা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি‘র সাথে জড়িত ছিল। সে হুজি সংগঠনে থাকাকালীন সময়ে ঝালকাঠির নলসিটি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমীর মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেয়। পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সে স্বেচ্ছায় গৃহত্যাগ করে এবং দুই মাস সমতলের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সে রনবীর ও রাকিব এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে যায়।

বাশার আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরিতে দক্ষ। সে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিকট থেকে বোমা তৈরির বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। জামাতুল আনসারের পাহাড়ে প্রশিক্ষণার্থীদের সে বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করত। বয়সের কারণে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বৈঠকে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত বাশার।

র‌্যাব জানায়, পাহাড়ে অভিযান শুরু হলে সে ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থকে পালিয়ে সিলেটে চলে যায় এবং সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের সাথে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে কিছুদিন আগে সে রনবীরের সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আত্মগোপন করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ