স্টাফ রিপোর্টার- মুন্সিগঞ্জে দশম শ্রেনী পড়ুয়া স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসি(১৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার ছায়া তদন্তে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাবের-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি বিজয় রহমান (১৯) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
কামান্ডার মঈন আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত বিজয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। সে গত ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া মামলার অপর আসামি আদিবা আক্তার এর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবা আক্তার এর সাথে সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ভিকটিম জেসিকার সাথেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়।
পরিচালক জানান, বিজয় উভয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অপর আসামি আদিবার সাথে গোপনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং অপর আসামি আদিবার গোপনে বিয়ের বিষয়টি ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পারে এবং গ্রেফতারকৃত বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রীনশর্ট মামলার অপর আসামি আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় ও অপর আসামি আদিবার মাঝে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।
ঘটনার বিবরনে কমান্ডার মঈন বলেন, মূলত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সে অপর আসামি আদিবার সাথে আলোচনা করে এবং গত ১ জানুয়ারি দুজনে মিলে ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকেলে অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসির সাথে দেখা করলে ভিকটিম বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রীনশর্ট দেখায় এবং এই সমস্যা মিমাংসা করার জন্য মামলার অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে আদিবা ফোন করে গ্রেফতারকৃত বিজয়কে ছাদে আসতে বলে। সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় ও অপর আসামি আদিবা ভিকটিম জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাষরোধ হয়ে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আসামীরা নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ভিকটিম জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজানোর উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত বিজয় ও মামলার অপর আসামি আদিবা মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভিতরে চলে আসে।
পশের বাসায় থাকা গ্রেফতারকৃত বিজয়ের চাচা ভিকটিমকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিমকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত বিজয় ভিকটিম জেসির ভাইকে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি মৃত্যুবরণ করেছে।
মৃত্যুর ঘটনা শুনে গ্রেফতারকৃত বিজয় এবং মামলার অপর আসামি আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ভিকটিম জেসির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারে জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় গ্রেফতারকৃত বিজয় ও তার অপর আসামি আদিবাসহ আরও ১-২ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর ৪ জানুয়ারি হত্যার অন্যতম সহযোগী আদিবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয় এবং সে বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে ৪ দিন আত্মগোপনে ছিল। সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। একপর্যায়ে তার সন্দেহ জাগে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের লক্ষে এখানে অভিযান চালাতে পারে। সেই আশংকা থেকে সে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে ছিল।