স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও, বংশাল, সবুজবাগ ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ২৯জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-৩। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে খিলগাঁও মালিবাগ রেইলগেইট, কমলাপুর, মতিঝিল, হাতিরঝিল, শাহবাগ, পল্টন, মানিকনগর, নন্দীপাড়া, গুলিস্তান এলাকায় ছিনতাইকারীদের বেশ তৎপরতা দেখা দেয়ায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এ সাঁড়াশি অভিযান চালায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটালয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের তৎপরতা বাড়ে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন এবং বই মেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় উৎসব মুখরতা তৈরী হয়। এ সুযোগে শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে আসছিল এই চক্রটি। এছাড়াও আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নাশকতা তৈরীর মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা ছিল এই চক্রটির।
সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন অলিগলিতে ওৎ পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়।
তিনি বলেন, সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করেনা।
ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যেসকল ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদেরকে আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে এবং অনুসরণকৃত ব্যক্তির সাথে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে টার্গেট ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন সদস্য উক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে আসলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে।
এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদেরকে টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে উক্ত ব্যক্তির পিছনে যেতে থাকে। ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশিয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাইকৃত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চক্রের সদস্যদের রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে কোনো বাসস্থান নেই। তারা সকলেই রাজধানীর ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সকলের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে উক্ত চক্রের সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়ায়।
র্যাব জানায়, গত ৬ মাসে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ৫৯টি অভিযান পরিচালনা করে ২০৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।