স্টাফ রিপোর্টার- কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চের অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তার করতে বা এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনও ঘটনার জেরে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মামলা, নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
তিনি জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তদন্তকালে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার সদস্যরা আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গারা। তদন্ত কমিটি অনন্ত ৫০ রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেছে। এসব রোহিঙ্গারা বলছেন, এটা পরিকল্পিত নাশকতা। ফলে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
বাকি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল উপযোগী করা, ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, আশ্রয়কেন্দ্রের ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত এবং বড় রাস্তার পাশ ছাড়া অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশমুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতস্ফূর্ত অংশ নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেস্টনি স্থাপন।
গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে ঘরসহ ২ হাজার ৮০৫টি নানা স্থাপনা এবং ১৫ হাজার ৯২৫ জন রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্থ হন।
এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক মানুষ আহত হন। পুড়ে যায় ৯ হাজারের বেশি ঘর।