স্টাফ রিপোর্টার- ঢাকার আদালত থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি দেশেই আছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার সকালে তিনি এ কথা জানান। এর আগে তিনি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনিম শিখাকে গ্রেফতারের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা দেশেই আছেন নাকি পালিয়ে গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, তারা দেশেই আছেন।
তিনি জানান, ছয়মাস ধরে তারা পরিকল্পনা করেছে, এরপর আদালত থেকে দুজনকে ছিনিয়ে নেয়। তারা সমন্বয়ের কাজটি তারা অতি গোপনে করেছে। স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আদালতের হাজত খানায় জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করেছে। স্বামী-স্ত্রী যখন হাজত খানায় দেখা করেছে ইশারা ইঙ্গিতে তারা তাদের প্লান বলেছে। আমরা যারা এসব নজরদারি করি, তাদের নজর এড়িয়ে তারা কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে।
দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার দিন আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী শিখা আদালত চত্বরে ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, হ্যাঁ তারা সেখানেই ছিলেন। পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়েছিল। সেটা মনিটরিং করেছে শিখা আর আইমান। এই অভিযানে ১০/১২ জন অংশ নিয়েছিল।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, আদলত থেকে দুই জঙ্গি পালানোর পর থেকেই সিসিটির একাধিক টিম তাদের ধরতে মাঠে কাজ করছে।
মূলত শিখা ও আয়মান সেদিন আদালত চত্বরেই উপস্থিত ছিল । দুজন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর তারা তাদের পূর্বের ভাড়াকৃত নারায়নগন্জের রুপগন্জের বাসায় যায়। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পলাতক দুই জঙ্গি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা দুইদিকে পালিয়ে যায়। নারায়নগন্জে ওই বাসাটিকে তারা আনসার হাউজ হিসেবে ব্যবহার করত ।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, সিটিটিসির একটি দল অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগরীর কোতয়ালী থানাধীন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গন হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর রাতে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা ওই নারীকে আশ্রয় দেওয়া হুসনা আক্তার’কে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
বর্তমানে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম এর নেতৃত্ব কে দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওসমান নামের এক ব্যক্তি বর্তমানে তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন। অচিরেই কাউন্টিার টেররিজম ইউনিট আদালত থেকে পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
জানা যায়, ফাতেমা তাসনীম শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে। একপর্যায়ে তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন এর মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সাথে তার বিয়ে হয়। উল্লেখ্য, সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিল। সোহেলের সাথে বিয়ের পর থেকে সে আরোও গভীরভাবে সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামী হিসাবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর থেকে বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শিখা কারাবন্দী সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে।
সিটিটিসি জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের উপর আক্রমন করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ফাতেমা তাসনীম শিখা (৩১) এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। পরিচয় গোপন করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম এর সদস্যরা জঙ্গী ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলায় একাধিক আনসার হাউস ভাড়া নেয়। সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা আনসার আল ইসলাম সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করত।