স্টাফ রিপোর্টার- ঈদ-উল ফিতর’কে কেন্দ্র করে ভুয়া র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৭ দুর্ধর্ষ ডাকাত কে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ। এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু সরন্জাম উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ।
রবিবার সকালে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ।
তিনি জানান, ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রামপুরা এলাকায় ভুয়া র্যাব নামধারী ডাকাতদলের ৭ (সাত) সদস্য মাইক্রোবাসযোগে ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণ করাকালীন সময়ে হাতেনাতে গ্রেফতার হয়। এই ডাকাত দলের দলনেতা হলো মোঃ জালাল উদ্দিন যে, নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন জালাল পরিচয় প্রদান করে থাকে তবে জিজ্ঞাসাবাদে জালাল জানায় যে, সে সেনাবাহিনীর চাকুরিচ্যুত সদস্য।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো- ডাকাত দলের দলনেতা মোঃ জালাল উদ্দিন (৪০) ওরফে ক্যাপ্টেন জালাল। ডাকাত দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড মোঃ বাদল হোসেন শেখ (৪২) ওরফে বাদল মাঝি, সাঈদ মনির আল মাহমুদ (৩৬) । মোঃ খোকন (৩০) শাহদাত হোসেন (২৬), মোঃ বাবুল (৩৮) মোঃ মহিদুল ইসলাম শেখ (৩৬) ।
এসময় তাদের কাছ থেকে – খেলনা পিস্তল ০১ টি, র্যাবের জ্যাকেট ০৭ টি, ডিবি জ্যাকেট ০১ টি, হাতকড়া ০১ জোড়া, ওয়াকিটকি ০২ টি, ব্যাটন ০২ টি, পুলিশ লেখা ব্যাগ ০১ টি, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ০১ টি, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ০১ টি, মোবাইল ০৯ টি। নগদ টাকা ২৪০০/- উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন গত ১৪ই এপ্রিল ডিবি মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার সময় গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে রামপুরা এলাকায় ভুয়া ডিবি/র্যাব ডাকাতি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংবাদ পাওয়ার পরপরই ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদের নির্দেশনায় এডিসি শাহ্ আলম মোঃ আখতারুল ইসলাম এর নেতৃত্বে খিলগাঁও জোনাল টিম রামপুরা থানাধীন ৩৫৩ পূর্ব রামপুরা ডিআইটি রোডস্থ লায়ন রামপুরা আই সেন্টারের সামনে পৌঁছানোর পর সেখানে পূর্বে থেকে অবস্থান করা সন্দেহজনক একটি কালো রংয়ের টয়োটা ভক্সি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-৫১-৭২০৯) দেখতে পায়। টিমের সদস্যগণ মাইক্রোবাসে র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত কিছু লোকজন দেখার পর তাদের পরিচয় জানতে চায় কিন্তু মাইক্রোতে অবস্থানকারী লোকজন নিজেদের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে টিমের সদস্যরা মাইক্রোতে অবস্থানকারীদের গতিবিধি সন্দেহ হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করে মাইক্রোটি তল্লাশি শুরু করে। তল্লাশি সম্পন্ন করে প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে মাইক্রোতে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের ভুয়া ডিবি/র্যাব হিসাবে প্রতিয়মান হয়।
ডিবি প্রধান জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এই ডাকাত দল রাজধানী জুড়ে বিশেষত মতিঝিল কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের যারা ব্যাংক/মানি এক্সচেঞ্জ/ মার্কেট ইত্যাদি থেকে অধিক পরিমান নগদ অর্থ লেনদেন করে তাদের টার্গেট করে। পরবর্তীতে ডাকাত দলের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির অবস্থান, বাসস্থান এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। ডাকাত দলের তথ্য সংগ্রহের পর তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তির নিকট হতে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য স্থান নির্ধারন করে এবং নির্ধারিত স্থানে কয়েকবার মহড়া অনুশীলন করে। উল্লেখ্য যে, এই ডাকাতদল সাধারণত চিটাগাং রোড হতে কুমিল্লা দাউদকান্দি পর্যন্ত মহাসড়ককে তাদের ডাকাতির জন্য উপযুক্ত স্থান নির্ধারন করে থাকে। ডাকাতির জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারনের পর ডাকাতদল তারিখ ও সময় নির্ধারন করে ৩ টি গ্রুপে ভাগ হয়।
একটি নিদিষ্ট ডাকাতি সম্পন্ন করতে তারা নির্ধারিত দিনের একদিন পূর্বেই দলের প্রত্যেক সদস্য তাদের ব্যক্তিগত ফোন বন্ধ করে দেয়। এই সময় দলনেতা জালাল ওরফে ক্যাপটেন জালাল প্রত্যেক গ্রুপে নতুন সীমসহ একটি করে বাটন মোবাইল ফোন প্রদান করে এবং ডাকাতি শেষ হলে তা ফেরত নিয়ে নেয়।
ডাকাতির সময় তারা ২জন সদস্য যারা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে নির্ধারিত দিনের একদিন পূর্বে হতে অনুসরন করে । অপর ৪/৫ জন সদস্য একটি গাড়ীসহ ১দিন পূর্বেই ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানের নিকটে একটি ভাল মানের হোটেলে ডিবি/র্যাব পরিচয় দিয়ে অবস্থান গ্রহন করে। এই দলে ডিবি/র্যাবের পোশাক, ওয়াকিটকি, হাতকরা, খেলনা পিস্তলসহ আইন-শৃঙ্খল রাক্ষাকরী বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি থাকে। ১ম গ্রুপ সিগনাল দিলে ২য় গ্রুপ টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে আটক করে এবং ভুক্তভোগির নিকটে থাকা নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তাকে নির্জন কোন স্থানে ফেলে দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী প্রচন্ড শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয় এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
ডাকাতি সম্পন্ন হলে প্রাপ্ত অর্থ দলনেতা জালাল ওরফে ক্যাপ্টেন জালাল দলের সকল সদস্যকে প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রদান করে এবং অর্থে একটি বড় অংশ নিজের জন্য, চলমান বিভিন্ন মামলার ব্যায় ও পরবর্তী কাজের প্রস্তুতির জন্য রেখে দেয়।
অতিরিক্ত কমিশনার জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে । এঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যম জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।