Search
Close this search box.

পাট ব্যবসায়ী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক সাবেক ধর্মমন্ত্রী

পথে প্রান্তরে ডেস্ক: শেখ হাসিনা সরকারের বিশ্বস্ত সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল। ভোটকারচুপির মাধ্যমে জামালপুরের ইসলামপুর আসনে হয়েছেন ৪ বার সংসদ সদস্য। এরআগে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সব দলের সাথেই ছিলো তার পথচলা। তবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন ১৯৯৮ সালে। যোগদান করে ২০০৮ সালে এমপি বনে যান। এরপরে পেয়ে যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এমপি হওয়ার আগে ছিলো না কিছুই। সামান্য পাট ব্যবসা করেই সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। ছিলো ২৯ লাখ টাকা ঋণ। এমপি হওয়ার পরেই আর পেছনে তাকাতে হয়নি সাবেক এই ধর্মমন্ত্রীকে।

ফরিদুল হক খান দুলালের ভাই মাসুম খানের নেতৃত্বে এলাকায় গড়ে তুলেন ত্রাসের রাজত্ব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে গড়ে তুলেন দুলাল বাহিনী। শেখ হাসিনার অন্যান্য মন্ত্রী এমপিদের মতো তিনিও নানা অপরাধ ও ঘুম, খুনের সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। সাবেক এই ধর্মমন্ত্রীর ইসলামপুরে রয়েছে ৪ তলা বিশিষ্ট ১টা বিশাল বাণিজ্যিক ভবন। ঢাকাতেও আছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। অস্ট্রোলিয়া ও কানাডাতেও আছে নামে বেনামে জায়গা জমি ও বাড়ি। চড়েন কোটি টাকা দামের গাড়িতেও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদুল হক খান তার এলাকার টিআর, খাবিখা, কাবিটা পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে কাজ না করেই দিনের পর দিন টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র অনুদান দিয়ে বাকী টাকা নিজের করে নিয়েছেন। ফরিদুল হক খানের সব অপকর্মের প্রধান হাতিয়ার ছিলো তার ভাই মাসুম খান ও তার দুলাল বাহিনীর লোকজন। দেওয়ানগঞ্জ ফুটানী বাজার থেকে উলিয়া বাজার পর্যন্ত যমুনা নদীর বাম তীর রক্ষা বাধের সব কাজ তাদের পছন্দের ঠিকাদারের নামে নিয়ে হাতিয়ে নেন শত শত কোটি টাকা।

এলাকায় এমপিওভুক্ত করণের নামে ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেন। এছাড়াও চাকরীর নিয়োগ ও বদলির রমরমা বাণিজ্যে তিনি নিজেকে রেখেছিলেন শীর্ষে। ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কোন কাজ না করেই উপজেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তার মাধ্যমে ১৫ বছরে হাতিয়ে নেন ৮০ কোটি টাকা।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ তহবিল থেকে ৪ কোটি ৮০ লাখ সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ টাকাই হরিলুট করেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়ন বাণিজ্যেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে যারা ৩০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ দিয়েছেন। তাদেরকেই মনোনয়নের সুপারিশ করে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। এক্ষত্রে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের করেন বঞ্চিত। এছাড়াও ইউনিয়ন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে লাখ লাখ টাকা নিয়ে পছন্দের ব্যক্তিকে ভালো পদে আসীন করেছেন। একারণেই ভেঙ্গে পড়ে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি

ইসলামপুরে শেখ রাসেল স্টেডিয়ামের ভূমি অধিগ্রহণ করার পূর্বেই সমস্ত জমি তার ভাইয়ের নামে আগে লিখে নেন। পরে বেশি দামে সরকারের নিকট অধিগ্রহণের নামে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্ব বাণিজ্যেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। হজ্ব সিন্ডিকেটের সাথেও নিজেকে করেছিলেন সম্পৃক্ত। হজ্বের সময় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে পাচার করেন বিদেশে৷ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হয়েই সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫০ জনকে হজ্ব করিয়ে নিয়ে এসেছেন। বাদ যায়নি তার কোন আত্মীয় স্বজন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যত প্রকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে৷ তার নামমাত্র অনুদান দিয়েই বাকি টাকা লুটেরাদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন এই সাবেক ধর্মমন্ত্রী।

এক সময়ের ঋণগ্রস্ত হয়েও হাজার কোটি টাকার মালিক সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রয়েছেন আত্মগোপনে। যেকোন সময় বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ এই সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানিয়েছেন জামালপুরবাসীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

সর্বশেষঃ