Search
Close this search box.

১লা জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম

সুমায়রা রহমান- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং বাকি শ্রেণিগুলোতে ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।

আমূল পরিবর্তন নিয়ে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিল। যাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বদলে যাবে শিখন ও মূল্যায়নের ধরন। কিন্তু শিক্ষকদের মাত্র এক ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণ দিয়েই তা বাস্তবায়ন শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। ফলে যারা নতুনভাবে শিক্ষার্থীদের শেখাবেন, মূল্যায়ন করবেন, সেই শিক্ষকেরা নতুন শিক্ষাক্রম শুরুর আগেই পাচ্ছেন না দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ। এতে শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টদের আশংকা, পূর্বের নীতিগুলোর মতো অন্ধকারে পা বাড়াচ্ছে নতুন শিক্ষানীতি।

নতুন শিক্ষাক্রম চালুর আগে মাধ্যমিক স্তরের তিন লক্ষাধিক শিক্ষককে এক ঘণ্টা করে অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরুর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ডিসেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষককে পাঁচ দিনের সশরীর প্রশিক্ষণ দেয়ার পথরেখাও ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাঁচদিন সশরীর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে জানিয়ে মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এখন অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এনসিটিবির তৈরি করা কনটেন্টের ভিত্তিতে। এ অনলাইনে প্রশিক্ষণে বিষয়ভিত্তিক জানানো হবে শিক্ষকদের। তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা সম্পর্কে ইতিমধ্যে, শিক্ষকদের অবহিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাক্রমে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া না হলে। দেশে ২০০৮ সালে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবায়িত হওয়ার পর মাউশির তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ৩৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না। ফলে এক ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণে লাখ লাখ শিক্ষক কী শিখবেন, আর কী শেখাবেন, সেই প্রশ্ন রয়ে যায়। পাশাপাশি পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণও যথেষ্ট নয় মনে করেন তারা।

এনসিটিবি এবারের নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছে। আর মাধ্যমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ দক্ষতা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের কাজটি করছে মাউশি। নতুন শিক্ষাক্রমে জোর দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠদানকে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হওয়ার কথা রয়েছে। এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। আর দুটিই থাকছে পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও। যা শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে।

চলতি বছরের মে মাসে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে পথরেখা দেয় এনসিটিবি।

এতে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে ৬৪ জেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে মূল প্রশিক্ষক বা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হবে। তারা আবার প্রতিটি উপজেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবেন। তাদের মাধ্যমে ডিসেম্বরে সারা দেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার কথা ছিল। কিন্তু মাউশির ব্যর্থতায় তা অন্ধকারে যাচ্ছে।

যদিও এনসিটিবি ও মাউশি বলছে, মূল প্রশিক্ষক তৈরি করা গেছে শুধু জেলা পর্যায়ে; আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি। ডিসেম্বরে শিক্ষকদের পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব না হওয়ায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে অনলাইনে প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে তারা।

মাউশি ও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, শিক্ষকদের আগামী বছর দুই দফায় সশরীর প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এখন অনলাইন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া শুরু করা হবে। আর এ জন্য তাদের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। এই অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশেষভাবে যোগাযোগ করে। যদিও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন কোন সুইচ নয় যে আমি তা চালু করে দিলাম আর তা বাস্তবায়ন হয়ে গেল। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নাই; পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে মনিটরিং করতে হবে তা কতটা কাজে আসছে সময়ের সাথে। এটাকে হালনাগাদ করতে হবে। যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদেরও দক্ষতা থাকতে হবে।

প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ মনে করেন, বাস্তবতা, দক্ষতা-অদক্ষতা এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে বয়সও একটি বড় বিষয় বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এরকম হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে না। সামগ্রিক বিবেচনায় প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তবে তা যথাযথ হতে হবে, সময় দিতে হবে এবং বাস্তবতা ও সময়ের নিরিখ বিচার করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ