Search
Close this search box.

পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নাই

রুপম আক্তার:
‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’- বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত স্লোগান গুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত পরিবেশকে রক্ষায় বহু আগে থেকে বৃক্ষরোপণের কথা বলে আসছেন সবাই। বৃক্ষরোপন সারাবছর করা গেলেও বাংলাদেশে চারা রোপণ করার উৎকৃষ্ট সময় হিসেবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় বর্ষাকালকে। তবে, রোপণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সারা বছরই‘ চারা-কলম’ লাগানো যায়, বলে  জানাচ্ছে সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. খ. ম. গোলাম সারওয়ারবলেন, বর্ষার শুরু অথবা শেষের দিকের সময়টা গাছ লাগানোর ভালো। কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে জানাযাচ্ছে, প্রথম বৃষ্টির পরপরই চারালাগানো উচিত হবেনা। কারণ প্রথম কয়েকদিন বৃষ্টির পরপরই মাটি থেকে গরম গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়, যা চারাগাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর এমনকি চারাগাছ মারা যায়। আর বলা হয়, যে কোনো গাছের চারা রোপণ করার সর্বোত্তম সময় দিনের শেষভাগে অর্থাৎপড়ন্ত বিকাল বেলায়।

সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, অনুকূল তাপমাত্রা, বৃষ্টিপর্যাপ্ত থাকে বলে চারাও সুন্দরভাবে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে। বর্তমানে সূর্যের প্রখর তাবদাহে প্রকৃতি এক ভয়াল মূর্তি ধারণ করেছে। দেশে প্রায় প্রতিদিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। এটিওসত্যি যে, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনসহব্যাপকনির্মাণকাজেরকারণেশহরেরতাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবেবৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরাঞ্চলে আবাদি জমি ও গাছপালা কমে যাওয়ায় বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে, ছাদ-বাগান করে শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতেপারে, এমনটাই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। সাধারণত বাগানসহ ছাদের তাপমাত্রা ও বাগানবিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৭.৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির বাগান তৈরি করে পারিবারিকফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা মেটানোরপাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

যেসব গুণের কারণে আমাদের এ দেশকে সবুজ-শ্যামল বলা হতো তার বেশির ভাগেই ছিল চারদিকে ঘন গাছপালা আর সবুজের সমারোহ। এখন সেই সবুজ-শ্যামলরূপ খুব কমই চোখেপড়ে। গাছপালা ও ফসলি জমি ধ্বংসের কারণে পাখপাখালিও এখন আর আগেরমতো তেমন দেখা যায়না। গাছপালা কাটার ফলে পাখিদের আশ্রয়স্থল ও কমে যাচ্ছে। দেশে অতিথি পাখিরআগমনও কমে গেছে। প্রতিনিয়তই এভাবে গাছপালা কেটে উজাড় করতে থাকলে পাখিদের বংশ বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরকম পরিস্থিতিতে, পরিবেশ সুরক্ষায় সারাদেশে গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিশেষ করে সব সিটিকরপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় গাছ লাগাতে বলা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বৃক্ষরাজি অনেক কম। তাই সচেতন তা বাড়াতে প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যেমন- পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি, বসতবাড়ি বনায়ন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফলদ-বনজ-ভেষজ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, ফলদ বৃক্ষমেলা। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

চারা রোপণের পর চারা টিকিয়ে রাখাই বড় কাজ। পরিবেশ সুরক্ষায় ২০১৯ সালে একদিনে এক কোটি ৩০ লাখ গাছ লাগিয়েছে  তুরস্ক। এর মধ্যে এক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃক্ষরোপণ বিচারে ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেতারা। এর আগে ইন্দোনেশিয়া এক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৩২,৬৪৭টি চারা রোপণ করে রেকর্ড গড়েছিল। অন্যদিকে তুরস্ক এক ঘণ্টায় রোপণ করে ৩ লাখ ৩,১৫০টি চারা।

বন্যামুক্ত, আলো-বাতাস চলাচল করতে পারেএবং সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গায় চারা রোপণ করা যায়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশেপাশে লাগাতেপারেন। এমন স্থানে দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, তাল, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, আম, কাঁঠাল, লিচুগাছ রোপণকরতেপারেন।

পাকাবাড়ির ছাদে টবে গাছেরচারা রোপণ করা যায়। এতে কমলালেবু, পেয়ারা, কুল, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদি, লিচুপ্রভৃতি গাছলাগাতে পারেন। বাড়ির দক্ষিণপাশে রোদ ও আলোর জন্য ছোটএবং কম ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদি গাছলাগানো যেতেপারে।
বাড়িরপূর্ব-পশ্চিমেমাঝারি উঁচু এবংমাঝারি ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। বাউকুল, আপেলকুল, সফেদা, আম্রপালি, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন গাছএখানে রোপণ করতে পারেন। বাড়ির উত্তর পাশে বড় ও উঁচু গাছপালা থাকলে ঝড়-তুফান প্রতিরোধ হয়। এখানে আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, বাঁশইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।

পতিত জমিতে আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাঁশইত্যাদি রোপণ করা উচিত। হাট-বাজারে ছায়দান কারীগাছ রোপণ করা উচিত। আম, কাঁঠাল, জাম, সেগুন, দেবদারু, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, কৃষ্ণচূড়া, বটগাছ রোপণ করা উচিত।
রাস্তারপাশে উঁচু ও ডালপালা ছাঁটাই করা যায়এমনগাছ রোপণ করা উচিত। মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা, ইপিলইপিল, শিমুলইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়। গ্রামের পথের দু’ধারেবাফিডার রোডেরপাশেশিশু, নিম, দেবদারু, চম্পা, ইপিলইপিল, পাইন্যাগোলাবালুকলুকি, মান্দার, পালিতমাদার, পানিয়ামাদার, বাবলা, খয়ের, বকফুল, তাল, খেজুরইত্যাদি লাগানো যেতেপারে।

বড় রাস্তা বা মহাসড়কের পাশে কৃষচূড়া, কনকচূড়া, রেইনট্রি, গগনশিরীষ, রাজকড়ই, শিলকড়ই, শিশু, মেহগনি, অর্জুন, দেবদারু, সোনালু, নিম, নাগেশ্বর, আকাশমণি, বকুল, পলাশ, তেলসুর, ঝাউ, বটলপামপ্রভৃতিগাছলাগানোযায়। রেললাইনেরপাশে মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, শিমুল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ