দেশে প্রতি বছর এসব বাতজনিত রোগের কারণে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন শতকরা ৫ দশমক ৫ শতাংশ মানুষ। তবে এ ধরনের রোগ দ্রুত শনাক্ত এবং যথাসময়ে চিকিৎসা করা হলে ঝুঁকি মুক্ত হওয়া যায় বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন যেকোনো ধরনের বাতজনিত রোগ বা আথ্রাইটিসে ভোগেন বলে জানিয়েছেন তারা। রোববার (৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘জয়েন্ট পেইন’ নিয়ে মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে জয়েন্ট পেইন বিষয়ক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ ‘ফিজিয়াট্রিক ম্যানেজমেন্ট অব জয়েন্ট পেইন’, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিশু রিমাউটোলজি ডিভিশনের হেড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার ‘অ্যাপ্রোচ টু দ্য পেডিয়াট্রিক পেশেন্টস প্রেজেন্টিং উইথ জয়েন্ট পেইন’, রিউমাটোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) সৈয়দ জামিল আব্দাল ‘অ্যাপ্রোচ টু দ্য অ্যাডাল্ট পেশেন্টস প্রেজেন্টিং উইথ জয়েন্ট পেইন’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি বাতজনিত রোগে ভোগেন। শহরের চেয়ে গ্রামের লোকজন বেশি বাতজনিত রোগে ভোগেন। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিলে কার্যক্ষমতা হারানো থেকে মুক্ত হওয়া যায়। তবে অস্থিসন্ধি বা হাড়ের গিরায় ব্যথা, গায়ে ব্যথা, মাংসে ব্যথা ইত্যাদি আথ্রাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলেও এই রোগ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সেমিনারে জানানো হয়, শতকরা ১০-২০ ভাগ শিশু বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধির রোগে আক্রান্ত। শিশুদের এ সমস্যাগুলো বর্তমানে ক্রমবর্ধমান। অস্থিসন্ধির প্রদাহ বলতে বুঝায় ফুলে যাওয়া, তরল পদার্থ নিঃসরণজনিত অবস্থা। এর লক্ষণগুলোর মধ্য রয়েছে– অস্থিসন্ধি নাড়াতে না পারা, নাড়ানোর সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া, অস্থিসন্ধি গরম হয়ে যাওয়া।
এ রোগ হলে রোগীদের ব্যবস্থাপনায় বয়স, লিঙ্গ, রোগভোগ কাল, ব্যথার ধরন, গিরা জমে যাওয়া, অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইতিহাস গ্রহণ করার প্রয়োজন। পাশাপাশি এ রোগটি প্রদাহজনিত কি না তা সুস্পষ্টরূপে নির্ধারণ করা, সম/অসম প্রদাহ কি না, অস্থিসন্ধির বিকৃতি, অস্থিসন্ধি ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ও আক্রান্ত অস্থিসন্ধির সংখ্যা অনুযায়ী রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অস্থিসন্ধি প্রদাহের ৮০ শতাংশ রোগ নির্ণয় হয়ে থাকে রোগের ইতিহাস থেকে, ১৫ শতাংশ শারীরিক লক্ষণ ও মাত্র ৫ শতাংশ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। একক কোনো পরীক্ষা এ ধরনের রোগ নিশ্চিত করতে পারে না। শিশুদের এ ধরনের রোগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু রিউমাটোলজি ডিভিশন অন্তঃ ও বহির্বিভাগে সেবা প্রদান, তথ্যাদির যথাযথ সংরক্ষণ, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক সোসাইটিতে অন্তর্ভুক্তি জরুরি। অস্থিসন্ধি প্রদাহজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জয়েন্ট পেইন একটি কমন রোগ। এই রোগ কোনো মানুষের নেই, তা খুঁজে বের করা কষ্টকর। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগটির যথাযথ চিকিৎসা না হলে মানুষ কর্মক্ষমতা পর্যন্ত হারাতে পারে। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি সরকারি হাসাপাতালে রিউমাটোলোজি বিভাগ খোলা উচিত। বাংলাদেশে বাতজনিত রোগের চিকিৎসক বা রিউমাটোলোজিস্টদের সংখ্যা খুবই কম। দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে রিউমাটোলোজিতে এমডি কোর্স করার সুযোগ নেই। তাই সরকারি বড় বড় হাসপাতালে এ কোর্স চালু করা প্রয়োজন।
উপাচার্য বলেন, আশার কথা হলো, বর্তমানে কিছু কিছু সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে রিউমাটোলোজি বিভাগের সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় রিউমাটোলোজিস্ট তৈরির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা। এতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।