জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে রাখার দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, যদি তাঁদের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয়, তাহলে ১২ মার্চ মানববন্ধন এবং ১৩ মার্চ থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে।
সরকার সম্প্রতি জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, যেমন স্থানীয় সরকার বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত নেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দাবি জানিয়েছেন।
অবস্থান কর্মসূচির সময় ইসি কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে, নীতিগত পর্যায়ে আলোচনা চলছে যে, কীভাবে এই সেবাগুলো একীভূত করা যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সরকারের কাছে তাঁদের অবস্থান জানানো হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের কাছে তাঁদের মতামত পৌঁছে দেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
নাসির উদ্দিন ব্যাখ্যা করেন যে, জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, “এনআইডি তো ভোটার নিবন্ধনের একটি বাইপ্রোডাক্ট। গত ১৭ বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কঠোর পরিশ্রম করে এটি পরিচালনা করে আসছেন এবং সারাদেশে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। সরকার নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সাংবিধানিক সংস্থা, তাই আমাদের মতামত দেওয়া হবে এবং সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আমাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য একটি আইন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন এই আইন বাতিলের দাবি জানায় এবং সেই দাবি মেনে নেওয়া হলে এনআইডি পুনরায় ইসির নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ বছর ১৬ জানুয়ারি, সিইসি ঘোষণা করেছিলেন যে, এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখার বিষয়ে তাঁদের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। তবে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে, যা নির্বাচন কমিশনকে উদ্বিগ্ন করেছে।
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, “কমিশন আমাদের দাবি মানার জন্য উদ্যোগ নেবে এবং আমরা কমিশনের পাশে আছি। এনআইডি যদি ইসি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়বে।”
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, “এনআইডি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য টানাটানি করেছে। এর আগেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, এবার নতুন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”তিনি আরও বলেন, “আমরা এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এবং ১২ মার্চ মানববন্ধন এবং ১৩ মার্চ থেকে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবো।”জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কোন সংস্থার অধীনে থাকবে, তা নিয়ে বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, এনআইডি ব্যবস্থাপনা ইসির অধীনেই থাকা উচিত, কারণ এটি ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে, সরকার একীভূত সেবা দেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে এনআইডি স্বতন্ত্র সংস্থার অধীনে যেতে পারে।এনআইডি ইসির অধীনে রাখার দাবিতে কর্মকর্তারা আন্দোলনে নেমেছেন এবং তাঁরা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, সরকার তাঁদের দাবির প্রতি কীভাবে সাড়া দেয় এবং এনআইডি সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়।