মলয় বিকাশ দেবনাথ – দিল্লি সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ায় বিজেপি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মমতা কলকাতায় একটি রাজনৈতিক সভায় বক্তৃতাকালে বলেন, শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিজেপি সরকার সেটা করতে দেয়নি। মনে হচ্ছে, বিজেপি সরকার শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ নিয়ে ‘চিন্তিত’। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। অথচ শেখ হাসিনার সফরে অংশ নিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যখনই আমাকে কোনো বিদেশি দেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়, মোদি সরকার আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। মোদি সরকার কেনো বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার দেখা করা নিয়ে এত চিন্তিত! মমতা বলেন, বিজেপি ভয় পেয়েছে। সে কারণেই তৃণমূলকে আটকানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে সোমবার ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরানের বাসভবনে আয়োজিত রিসেপশন ডিনারে যোগ দিয়ে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তিনি আমার বোনের মতো। আমি এবার দিল্লিতে তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কী করা যেতে পারে?’
এ সম্পর্ক সত্যি দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখে মমতা জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনাকে অবমাননা করা হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে সেটা শুভ সংকেত বয়ে আনবে না! এই চিঠির উপলক্ষ ১ জুলাইয়ের একটি ঘটনা। সেদিন কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস ভবনের সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল স্থানীয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদেই সেই সমাবেশের ডাক দিয়েছিল কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনটি। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রশাসন তার অনুমতিও দিয়েছিল। ওই সমাবেশে আয়োজক সংগঠনের কর্মীরা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুশপুত্তলিকা পোড়ান বলেও অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষা করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে‒এই মর্মে একটি স্মারকলিপিও উপ-দূতাবাসের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সূত্র-টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সেই ঘটনার পর মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার। কেন্দ্রের প্রতি দাবি জানিয়েছিলেন, দিল্লি-ঢাকা সুসম্পর্কের স্বার্থে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে যেন সংযত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় নবান্ন থেকে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ১৫ জুলাই ২০১৭ সালে পাঠানো এক চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সেদিন যেভাবে কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে, তা ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য আদৌ কোনও ইতিবাচক বার্তা বহন করছে না। ভারত সরকার যদি সত্যিই ঢাকাকে পাশে চায়, তাহলে সঙ্ঘ পরিবার ও তার সদস্যদের এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের রাশ টানার ব্যবস্থা করুক।’
দলের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করা তৃণমূল কংগ্রেসের এক সিনিয়র সংসদ সদস্য বলেন, ‘শেখ হাসিনার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে পরিষদের নেতাকর্মীরা সেদিন যেভাবে তাকে অপমান করেছেন, তৃণমূল নেত্রী তা মোটেও ভালোভাবে নেননি। একদিকে পাকিস্তান ও অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে যখন চরম উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, তখন দেশের সবচেয়ে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এ ধরনের আচরণ চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলেই আমরা মনে করছি।’ সেদিন হাসিনার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরাই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে‒ কেন্দ্রকে সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।