পথে প্রান্তরে ডেস্ক- কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। ২০ বছরের বেশি সময় পর গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কংগ্রেসের সভাপতি হচ্ছেন। স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ অক্টোবর) ভোট গণনা শেষে জানা গেছে যে, খাড়গে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৯৭টি। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৭২টি ভোট।
কংগ্রেসের সেন্ট্রাল ইলেকশন অথরিটি (সিইএ) বলছে, দেশে মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল ৩৬টি এবং বুথের সংখ্যা ৬৭টি। প্রতি ২০০ ভোটার পিছু একটি করে বুথ নির্ধারিত করা হয়। ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার কারণে কর্নাটকের বল্লারির সাঙ্গানাকাল্লুর শিবির থেকে ভোট দেন রাহুল। তার সঙ্গে ভোট দেন যাত্রায় অংশ নেওয়া প্রায় ৫০ জন ‘ভারত যাত্রী’।
এই প্রথম বার ভোটদাতাদের কিউআর কোডসহ পরিচয় পত্র দিয়েছে সিইএ। পরিচয় পত্র ছাড়া ভোট দেওয়া যায়নি। ভোট গ্রহণের জন্য ৯৪৩ জন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেছে কংগ্রেস।
ভোটের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও রাহুল গান্ধী কর্ণাটকের এক সংবাদ সম্মেলনে খাড়গেকে বিজয়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম কংগ্রেসের সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ বসতে চলেছেন। তবে খাড়গে জয়ের পথে থাকায় দলের রাশ থাকছে গান্ধী পরিবারেরই হাতে।
এর আগে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এবং দিগ্বিজয় সিংহ ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা ভোটে মনোনয়ন পেশ করবেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনেই সরে যান। অপরদিকে খাড়গের নাম প্রস্তাব করেন দিগ্বিজয়।
কংগ্রেসের জি-২৩ ‘বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী’রও অনেকেই খাড়গের নামই প্রস্তাব করেছেন। ২০২০ সালের আগস্টে স্থায়ী সভাপতি চেয়ে গুলাম নবি আজাদ, তারুরসহ এই ২৩ জনই চিঠি দিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধীকে। সেই থেকেই দলে চাপা উত্তেজনা ছিল। অবশেষে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেন।
মল্লিকার্জুনের জন্ম খড়গে কর্ণাটকের বিদর জেলার ভালকি তালুকের ভারাওয়াট্টিতে। ১৯৪২ সালের ২১ জুলাই মাপান্না খড়গে এবং সাবভার ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
তিনি গুলবার্গার নূতন বিদ্যালয় থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন এবং গুলবার্গার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং গুলবার্গার শেঠ শঙ্করলাল লাহোটি আইন কলেজ থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৩ মে ১৯৬৮ তারিখে রাধাবাইকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুটি কন্যা এবং তিনটি পুত্র রয়েছে।
তিনি বিচারপতি শিবরাজ পাতিলের অফিসে একজন জুনিয়র হিসাবে তার আইনী অনুশীলন শুরু করেছিলেন এবং তার আইনি কর্মজীবনের প্রথম দিকে শ্রমিক সংগঠনগুলির জন্য মামলা করে আলোচনায় আসেন তিনি।
খড়গে গুলবার্গার সরকারি কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন যখন তিনি ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে, তিনি এমএসকে মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের আইনী উপদেষ্টা হন। তিনি সম্মিলিত মজদুর সংঘের একজন প্রভাবশালী শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাও ছিলেন এবং শ্রমিকদের অধিকারের জন্য অনেক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৬৯ সালে, তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং গুলবার্গ নগর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন।
তিনি কর্ণাটকের একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ এবং কর্ণাটক বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। ২০০৮ সালের কর্ণাটক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সময় তিনি কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ছিলেন।
তিনি নজিরবিহীন ৯ বার বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে রেকর্ড ১০ বার নির্বাচন জিতেছেন (১৯৭২, ১৯৭৮, ১৯৮৩, ১৯৮৫, ১৯৮৯, ১৯৯৪, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৮, ২০০৯) এবং ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনে গুলবার্গা থেকে উমেশ যাদবের বিরুদ্ধে হেরেছেন। মল্লিকার্জুন খড়গে ২০১৪-২০১৯ সময়কালে লোকসভায় কংগ্রেস দলের নেতা ছিলেন।
সর্বশেষ ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে।