Search
Close this search box.

রুশ হামলায় অন্ধকারে ইউক্রেন

রুশ হামলায অন্ধকারে ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক – রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার ২৩৯ দিনের মতো যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। দেশটির বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে মুহুর্মুহু হামলা চালাচ্ছে দেশটি। এর জেরে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দেশজুড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এই নিয়ে ইউক্রেনের জাতীয় পরিষেবা কোম্পানি দেশটির নাগরিকদের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার মধ্যে সবকিছু চার্জ দিতে বলেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ অক্টোবর থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর হামলা বৃদ্ধি করেছে। বুধবারও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। দেশটির গ্রিড অপারেটর ইউক্রেনেরগো বলছে, বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে একই সময়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। এই নিয়ে ফোন, পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ, ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনেরগো দেশটির নাগরিকদের পানি মজুদ করে রাখতে বলেছে। পাশাপাশি গরম মোজা ও কম্বল রাখতে বলেছে। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ হামলায় দেশটির ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান। ইউক্রেনেরগো জানিয়েছে, গত ১০ দিনে বিদ্যুৎ স্থাপনায় অনেক হামলা হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ও খরচের বিধিনিষেধ হিসেব করব। এটি ইউক্রেনজুড়ে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হতে পারে।
ইউক্রেনের নাগরিকদের পানি মজুত করে রাখতে বলেছে। পাশাপাশি গরম মোজা ও কম্বল রাখতে বলেছে। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ হামলায় দেশটির ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান।
ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় শীত আসতে আর কয়েক দিন বাকি। দেশের তাপমাত্রা ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরে সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে। আর ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। এই সময় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যায়। পূর্ণমাত্রার শীত যখন আসি আসি করছে, ঠিক তার আগে গত এক সপ্তাহে রুশ হামলায় ইউক্রেনের ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। এতে দেশটির ১ হাজার ১০০ শহর ও গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গত ১০ দিনের রুশ হামলায় ইউক্রেনের দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক, কিরোভোগ্রাদ, মিকোলাইভ, ঝিতোমির, খারকিভ, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন অঞ্চলের ১ হাজার ১৬২টি শহর ও গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন অন্ধকারে। সরকারের জরুরি সেবা বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানী কিয়েভসহ ১৬টি অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র, কামিকাজে ড্রোন ও গোলা দিয়ে প্রায় ১৯০টি বড় ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত ১৭০ জন নিহত হন।
মঙ্গলবার নতুন করে মিকোলাইভ, ঝিতোমির, কিয়েভ, দিনিপ্রো, জাপোরিঝঝিয়া, খারকিভ অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উষ্ণ পানি সরবরাহব্যবস্থা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব বলছে, ইউক্রেনীয়দের মানসিকভাবে দুর্বল করতে এভাবে বিদ্যুৎ স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপপ্রধান কিরিলো তিমোশেনকো বলেন, সারা দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। পানি, উষ্ণতা ও বিদ্যুৎবিভ্রাট থেকে উত্তরণে পুরো দেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে। কৌশলগত কারণে ইউক্রেনের মিকোলাইভ শহরটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে যুদ্ধের শুরু থেকে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনের কাছেই রয়েছে। গত সোমবার রাত ও গতকাল সকালে সেখানে ব্যাপক হামলা চালায় রাশিয়া। এতে মিকোলাইভের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই শহরের আবাসিক এলাকায়ও রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে মিকোলাইভে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এতে একজন মারা গেছেন। কিয়েভে সোমবার ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। এতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন। এরপর সেখানকার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ হামলায় তিনজন নিহত হন। হামলায় কিয়েভের বেশ কিছু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেখানকার পানি সরবরাহব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে।

ঝিতোমির শহরে ২ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের বসবাস। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই শহরে কেউ বিদ্যুৎ, পানি পাচ্ছে না। হাসপাতালগুলো বিকল্প ব্যবস্থায় কাজ চালাচ্ছে। একই পরিস্থিতি দিনিপ্রো শহরের। হামলার ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থায় গতকাল দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পানি সরবরাহব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হামলায়।

জাপোরিঝঝিয়া ও খারকিভের বড় অংশ এখন ইউক্রেনের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। প্রায় প্রতিদিনই এসব এলাকায় হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। এ দুই শহরে হামলা চালানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ১০ অক্টোবর থেকে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার হামলায় ধ্বংস হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে দেশজুড়ে ব্ল্যাকআউট হচ্ছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ায় পাল্টা হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার কার্স্ক ও বেলগোরোদ অঞ্চলে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। গোলার আঘাতে বেলগোরোদে একটি রেলস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে রেলসেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। কার্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের গোলার আঘাতে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে ব্যবহৃত পাইপলাইনে বিস্ফোরণের ঘটনায় নতুন তথ্য সামনে এনেছে ডেনমার্কের পুলিশ। একই ধরনের কথা বলছে সুইডেনও। তারা বলছে, শক্তিশালী বিস্ফোরণের কারণে এই গ্যাস পাইপলাইনে লিকেজ হয়েছে। সুইডেনের গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর ও বিস্ফোরণের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন-১-এর ৫০ মিটার ধসে গেছে। তবে এই বিস্ফোরণ ঠিক কী কারণে হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে এখনো তা জানা যায়নি। এ ছাড়া কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সে সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। অবশ্য রাশিয়া বলেছে, তাদের ওপর দায় চাপানোর জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্কের তদন্ত সম্পর্কে আমরা যা জানতে পেরেছি তা হলো, রাশিয়ার ওপর দায় চাপানোর জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ