আন্তর্জাতিক ডেস্ক – জাপানের ওপর দিয়ে একটি মধ্যম পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপদেশটির অনেক অঞ্চলে সতর্কতা সিস্টেমও চালু করা হয়। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল। জাপান সরকার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনাকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
উত্তর কোরিয়া গত একমাসে সপ্তমবারের মত একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। মনে করা হচ্ছে ২০১৭ সালের পর এটিই তাদের পরীক্ষা করা বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র। দক্ষিণ কোরিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার পূর্ব তীরে স্থানীয় সময় সকাল আটটার কাছাকাছি এই ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়া হয়। উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমানবিক অস্ত্র পরীক্ষার উপর জাতিসংঘের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির উপর জাতিসংঘের কঠোর অবরোধ রয়েছে। কিন্তু পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি নিয়মিত এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে। দেশটির নেতা কিম জং আন সামরিকভাবে দেশটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরের পর আর এতো বড় মিসাইল ছোঁড়া হয়নি। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ছোঁড়ার পর মধ্যম সীমার ক্ষেপণাস্ত্রটি দুই হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায় এবং ত্রিশ মিনিটে ৮০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। পরে জাপান সাগরে গিয়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি।
জানুয়ারি মাসে উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। দেশটি বেশ কয়েকটি অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে সাগরে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জাই ইন বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক কার্যক্রম ২০১৭ সালের চরম উত্তেজনার স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে, তখনও উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকটি পারমানবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল এবং তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপ করেছিল, যার মধ্যে কিছু জাপানের ওপর দিয়েও উড়ে গিয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহ্যাপের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ছোঁড়া মিসাইলটির সাথে ২০১৭ সালের হোয়াসোং-১২ মিসাইলের বেশ সাদৃশ্য আছে। দুই হাজার আঠারো সালে মি. কিম পারমাণবিক অস্ত্র বা দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দুই হাজার উনিশ সালেই উত্তর কোরিয়ার এই নেতা বলেন তিনি আর সেই স্থগিতাদেশ মানতে বাধ্য নন। যুক্তরাষ্ট্র জানুয়ারি মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এরই প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া কয়েকটি মিসাইল নিক্ষেপ করে। চলতি মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়া যেসব ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা করে তা আমেরিকা ও জাপানের ব্যয়বহুল ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভন্ডুল করে দিতে সক্ষম। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক ন্যাভাল কমান্ডার প্রফেসর কিম ডং ইয়ুপ বলেন, উত্তর কোরিয়া বিচ্ছুর লেজের মতোন একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার মূল উদ্দেশ্য আক্রমণ নয়, প্রতিরক্ষা করা। তাই দেশটি ‘বৈচিত্র্যময় এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ নিশ্চিত করছে। উত্তর কোরিয়া গত দু’সপ্তাহের মধ্যে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু জানুয়ারি মাসে ঘন ঘন এধরণের পরীক্ষা কোন স্বাভাবিক ঘটনা না। উত্তর কোরিয়ার সরকার সাধারণত এধরণের মিসাইল পরীক্ষা চালায় দেশটির রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলিকে সামনে রেখে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া যখন একসাথে সামরিক মহড়া চালায় তখনও উত্তর কোরিয়া এধরণের ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে উড়িয়ে নিজের শক্তি সম্পর্কে জানান দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগী এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এ কাজ করেন অংকিত পান্ডা। উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে।