Search
Close this search box.

ঈদকে সামনে রেখে মসলার বাজার চড়া

মসলার বাজার চড়া

স্টাফ রেোপর্টার \  কোরবানি ঈদের এখনও বাকি আট দিন। এর মধ্যেই ঈদকে কেন্দ্র করে মসলা জাতীয় পণ্যগুলোর দাম বাড়ছে। এরই মধ্যে কোরবানিতে অন্যতম প্রয়োজনীয় মসলা পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আদা-রসুন, এলাচ এবং দারুচিনির দামও এখন চড়া।

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে নতুন করে মসলার দাম বাড়ায় বড় বিপদের মুখে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। ঈদের আগে মসলা, তেল, চাল-ডালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, কোরবানি ঈদে নিত্যপণ্যের মতো মসলাও অপরিহার্য পণ্য। কারণ রান্নায় অবশ্যই মসলা ব্যবহার করতে হয়।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাই এখন মসলার দামও বাড়ছে। তবে চাল-ডাল, তেল-আটার দাম যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে মসলার দাম বাড়েনি বলে জানান তারা। দাম বৃদ্ধির পেছনের যুক্তি হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে। দেশের ভেতরে পণ্য আনা নেওয়ার খরচও বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার স্বার্থে অন্য পণ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম বৃদ্ধির হতেই পারে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ মসলা মজুত রয়েছে, তাতে আরও চার মাস চলবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বাড়েনি। কিন্তু বাজার তদারকি না থাকার কারণে পণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো বাড়াচ্ছে।

রাজধানীতে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। একই পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে।

আর আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে। যা আগের সপ্তাহে ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকা ৩৮০ টাকা কেজিতে। আর দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে। লম্বা জিরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় হঠাৎ সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, রসুন, আদাসহ প্রায় সব মসলার দাম বাড়তি।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ ভিন্নতারা বলেন , ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। পরিকল্পিতভাবে ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। কারণ এসময় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে।

এদিকে খুচরা বাজারে শুকনা মরিচের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজিতে। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে। বিদেশি শুকনা মরিচের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে।

১০ টাকা বেড়ে দেশি হলুদের গুড়া কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা ৩৫০ টাকা দরে। আমদানি করা হলুদও বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে।

জিরা ও ধনিয়ার গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে। এ চিত্র রাজধানীর খোলা বাজারের। এছাড়া প্যাকেটজাত মরিচের গুড়ার দামও বেড়েছে আকার ভেদে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে গুড়া মসলা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের খরচ বেড়েছে। গুড়া মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে। দেশি মরিচের গুড়ার দাম ৩০০-৩৪০ টাকা কেজি। আর দেশি-ভারতীয় মিলিয়ে তৈরি মরিচের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজিতে। হলুদের গুড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজিতে। তারা বলেন, ভালো জিনিস নিলে দাম একটু বেশি দিতে হবেই।

এদিকে ২২০০ টাকার এলাচ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২৩০০-২৪০০ টাকা কেজিতে। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে। গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। কালো গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে। কাজু বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে।

মসলার দর বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

টিসিবির তথ্য মতে, রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহে আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। বিদেশি পেঁয়াজ আজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে।

দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। বিদেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ১৪০ টাকায়।

মসলার মধ্যে জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। দারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা ৪৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে। বাজারগুলোতে লবঙ্গের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকায়।

এছাড়াও ধনে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে ও তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। যা আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে।

টিসিবির তথ্য মতে, রাজধানীতে শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। বিদেশ থেকে আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা ৩৮০ টাকা কেজিতে।

১০ টাকা বেশি দরে দেশি হলুদের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায়। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকা।

কমলাপুর বাজারে আসা ক্রেতা আশিক হোসেন  বলেন, যে টাকা বেতন পাই, তা বাসা ভাড়া আর চাল-ডাল কিনতে চলে যায়। সামনে ঈদ তার আগেই মসলার দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। দাম জিজ্ঞেস করেই এখন চিন্তায় পড়ে গেলাম।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ