স্টাফ রিপোর্টার \ রাজধানীর গুলিস্তানে বেপেরোয়া ভাবে বাস চালিয়ে অসহায় দরিদ্র কৃষককে চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় ঘাতক মনজিল পরিবহনের বাসের চালক মোঃ আল-আমিনকে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
দুপুরে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, গত ০২ জুলাই বাসচাপায় নিহত দরিদ্র কৃষক মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫) তার শ্যালক, ভাগিনা ও ভায়রাকে নিয়ে গোলাপশাহ মাজার থেকে পায়ে হেঁটে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এসময় মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের দুইটি বাস বেপরোয়া গতিতে প্রতিযেগীতায় নামলে বাস দুটি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে একটি বাস নিহত মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫)কে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়। দুই বাসের চাপায় পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর বাসে থাকা যাত্রীদের তোপের মুখে বাসের ড্রাইভার আল আমিন বাসটি রেখে কৌশলে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১০৫ ধারায় পল্টন মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ছায়া তদন্তে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল রাতে মুন্সিগন্জ সদর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন বলছেন, গ্রেফতারকৃত আল-আমিন কর্মজীবনের শুরুতে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে ০৫ বছর কাজ করে। ২০১২ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বলাকা বাসে ০৪ বছর হেলপারের কাজে নিযুক্ত ছিল। ২০১৭ সালে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হিসেবে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরিতে গাড়ি চালানো শুরু করে। সে গত জুলাই আনুমানিক সাড়ে সাতটায় মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০ বাসটি নিয়ে চিটাগাং রোড থেকে রাজধানীর কামারপাড়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পরবর্তী স্টপেজে বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের তার বাসে আগে নেয়ার জন্যই বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতে থাকে। এমতাবস্থায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহন এর চালক আল-আমিন অপর একটি গাড়িকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে ভিক্টিম মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫)কে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আল আমিন তার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার দাবী করলেও সে কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদর্শন করতে পারেনি। সে অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার ড্রাইভিং এর উপর কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। গাড়ীর হেলপার হিসেবে চালকের কাছ থেকে সে ড্রাইভিং শিখেছে। ট্রাফিক নিয়মাবলী সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই। যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে চালক ড্রাইভিং এর প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলে, তখনই গাড়ী দূর্ঘটনায় পতিত হয় এবং নিরীহ পথচারীদের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক এসময় বলেন, নিহত মোঃ জাহাঙ্গীর মোল্লা ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার পিতা জীবিত নেই। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ০৪ শিশু কন্যা সন্তান নিয়ে তার অভাবের সংসার। তার বড় কন্যা সন্তানের বয়স ০৮ এবং ছোট কন্যা সন্তানের বয়স ০৪ মাস। সে কৃষি কাজ করে তার পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে তার পুরো পরিবারটি সম্পূর্ণরূপে অসহায় এবং নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।