Search
Close this search box.

ডিসেম্বরে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে চলতে প্রস্তুত মেট্রোরেল

রাকিব হাসান- ডিসেম্বর মাস থেকে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চালু হবার জন্যে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে  ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।

ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, অক্টোবর ৩১ তারিখ পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ ৮৩.৬৮% অগ্রগতি হয়েছে। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ ৯৪.৫৭% শেষ। এই রুটে ডিপো, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিকাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর এর মধ্যে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এর কাজ শেষ হবে।

রিজার্ভ সংকট এ মেট্রোরেলের কাজে কোন প্রভাব পড়বে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ডিএমটিসিএল এর এমডি।

প্রথম ফেজের কারিগরী কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি। উত্তরা টু আগারগাঁও পর্যন্ত কারিগরী কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা টু কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু করার আশা তার।

১০ সেট ট্রেন নিয়ে প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এ রেল। যেখানে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে। সেই সঙ্গে রেলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে অনেক অপেক্ষার মেট্রোরেল।

উন্নত মহানগর ঢাকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ সেই মেট্রোরেল বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। এই স্বপ্নের প্রকল্প ঢাকা শহরকে বর্তমান অবস্থা থেকে আধুনিক কসমোপলিটনে রূপান্তর করবে।

মানুষের ভোগান্তি দূর করতে, ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য বর্তমান সরকার ২০১২ সালে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করে। পরীক্ষামূলক এই চলাচলের জন্য মোট ১৯টি ধাপ শেষ করতে হয়েছে। সেই ধাপগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়াই এই চলাচলের উদ্দেশ্য।

ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে ট্রেন। তাই সময় আর গতির মেলবন্ধন ঠিক করার পরীক্ষাও চলছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের ইন্টিগ্রেশন টেস্ট। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের পথে চলবে ১০ সেট ট্রেন। প্রতি সেট ট্রেনে থাকছে ছয় বগি। একেক বগিতে ৫৪ জনের বসার ব্যবস্থা। দাঁড়িয়ে ভ্রমণের জন্য আছে পর্যাপ্ত জায়গা।

একেকটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৮ জন যাত্রী চড়তে পারবেন। সেই হিসেবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ঘণ্টায় যাতায়াত করবেন কমপক্ষে ৩০ হাজার যাত্রী। এই পথের ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। স্টেশনগুলোতে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রতি স্টেশনের দ্বিতীয় তলাটি যাত্রীরা ফুটওভারব্রিজ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।

থাকবে নানা পণ্যের দোকান। তবে, তৃতীয় তলার প্ল্যাটফরমে উঠতে লাগবে টিকিট। গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা সব স্টেশনেই টিকিট কাটতে পারবেন। থাকছে মেট্রোপাসের সুবিধাও। শুরুতে ১০ মিনিট পরপর মিলবে ট্রেন। পরে যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর ট্রেন এসে দাঁড়াবে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য।

২৪ সেট ট্রেন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল করবে। পুরো পথটি চালু হলে ঢাকার যোগাযোগে যেমন গতি আসবে তেমনি জিডিপিতে যুক্ত হবে ১ শতাংশ। উদ্বোধনের মাত্র দুই মাস বাকি। মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি বিশেষায়িত পুলিশ বাহিনী। যা এখনো আটকে আছে প্রাথমিক পর্যায়ে।

মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ আসবে সরাসরি জাতীয় গ্রিড থেকে। এ জন্য উত্তরা ও মতিঝিলে দুটি ১৩২ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৮০ মেগাওয়াট আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জোগান থাকবে।

পরীক্ষামূলক চলাচলেই এখন মাসে কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আসছে। বাণিজ্যিক চলাচলে এই খরচ আরো বাড়বে। তারপরেও ঢাকার নগর পরিবহন ব্যবস্থাকে পালটে দেবে মেট্রোরেল।

উল্লেখ্য, ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল। যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে’র একটি অংশ। আর ১৮৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেল ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯০৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথম বারের জন্য খোলা হয়েছিল।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান হলো প্রথম দেশ যারা ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেল ব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় মেট্রোসিস্টেম নির্মাণ শুরু করে। এর পরে ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রোরেল ব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেল ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ