স্টাফ রিপোর্টার- নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ফসিল ফুয়েলের অপ্রতুলতার কারনে এখন থেকেই বিকল্প জ্বালানিতে রুপান্তরিত হতে হবে। সোলার প্যানেলকে গ্রাহকের মাঝে জনপ্রিয় করতে হবে। পাশাপাশি সোলার প্যানেল বসানোর পর এর রক্ষনাবেক্ষনেও মনোযোগী হতে হবে। ডেসকো সোলার নিয়ে কাজ করছে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিচ্ছে। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আগামীতে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডেসকো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডেসকো’র নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার জহিরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সোলার নেট মিটারিং সুবিধাদি গ্রাহকদের মাঝে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ডেসকো এলাকায় OPEX মডেলে নেট মিটারিং কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। বসুন্ধরা বি ও বি বিভাগের আওতাধীন বসুন্ধরা এলাকার কে ব্লকে মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার রুফটপ ‘সোলার নেটমিটারিং’ পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন বিনিয়োগ লাভ জনক বিনিয়োগ। বাড়ির ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপন করে আর্থিক ভাবে যে কেও লাভবান হতে পারেন । কারন সোলার সিস্টেম স্থাপনে প্রতি ইউনিটের মূল্য সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) টাকা যেখানে ঢাকা শহরে বসবাসরত সকলেই প্রতি ইউনিট নূন্যতম ১০ টাকা হিসেবে বিল দিচ্ছে । ডেসকো এলাকায় প্রায় ৫০,০০০ হাজার বিল্ডিং এর ছাদ রয়েছে এবং তাদের ডিমান্ড এর কিছু অংশ যদি সোলার সিস্টেম থেকে গ্রহন করে সেক্ষেত্রে লোড ব্যবস্থাপনায় বেশ অবদান রাখতে পারে। এক জরিপে দেখা গেছে, ডেসকো এলাকার যে সমস্ত গ্রাহকের ছাদ রয়েছে তারা যদি ছাদের কিছু অংশ সোলার সিস্টেম স্থাপন করে অর্থাৎ নূন্যতম ৫ কিলো ওয়াট সিস্টেম স্থাপন করে সেক্ষেত্রে ২৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোড জাতীয় গ্রীডে সাশ্রয় করা সম্ভব ।
আর ৫ কি:ও: সিস্টেম স্থাপন করলে ২০ বছর মেয়াদী প্রকল্পের প্লেব্যাক পিরিউড হয় ৬-৭ বছর । সেক্ষেত্রে লাভ জনক একটি বিনিয়োগ । ডেসকো’র এলাকায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে দৃশ্যমান পরীক্ষামূলক ভাবে ৬ কিলোওয়াট ডেসকো তার নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপন করেছে। যা আজকে উদ্বোধন হয়েছে। ২০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য হচ্ছে ৪.৫০ টাকা, প্রকল্প ব্যয় সর্বসাকুল্যে ৫ লক্ষ টাকা । প্লেব্যাক পিরিউড হবে ০৭ বছর । এখান থেকে গ্রাহক যে সুবিধা পাবে তা হলো মাসিক বিলের চেয়ে কম মূল্যে-বিদ্যুৎ ক্রয় করতে পারছে । ডেসকো এলাকায় আরও ৪ (চার) টি এই ধরনের প্রকল্প নেয়া হবে এবং সেখানে থেকে ডেসকো এলাকার সকল গ্রাহক দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজস্ব বিনিয়োগে সোলার সিস্টেম স্থাপন করে নিজে লাভবান হতে পারবে এবং জাতীয় উন্নয়নে ও অবদান রাখতে পারবেন । অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি । বিশ্বব্যাপী প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাপক ব্যবহার চলমান রাখার কারণে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জলবায়ুর উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে । এক্ষেত্রে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশ্বময় ব্যবহার এখন সময়ের দাবি ।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে । দেশের অর্থনীতিতে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে জ্বালানির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। অতএব, নবায়নযোগ্য জ্বালানির নতুন নতুন সম্ভবনা খুঁজে বের করার পাশাপাশি উদ্ভাবনী ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি ও জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের উপর যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছেন। ভৌগলিক অবস্থায় কারণে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে সৌর শক্তি । সোলার সিষ্টেম স্থাপনের জন্য অন গ্রিড সিস্টেমে OPEX Ges CAPEX মডেলে সোলার স্থাপন করে গ্রাহক সেখান থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের প্রচলিত ট্যারিফেই বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। এর ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও জনগনের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ অপরিহার্য । রুপকল্প ২০২১ অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ । সার্বজনীন বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের অভিপ্রায়ে জ্বালানি বহুমুখীকরণকে বিদ্যুৎ বিভাগ অন্যতম কৌশল হিসাবে গ্রহন করেছে । জ্বালানি বহুমুখীকরণের আওতায় প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি নবায়ণযোগ্য জ্বালানি হতে পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডি-৭) অন্যতম অভিষ্ট লক্ষ্য। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রধান উৎসসমূহ হচ্ছে সৌর শক্তি, হাইড্রো, বায়োমাস, জিয়োথারমাল, ওয়েভ এবং টাইডাল এনার্জি। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে সৌর শক্তি । কিন্তু প্রতি মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিন একরের অধিক ভূমির প্রয়োজন হওয়ার বৃহৎ আকারের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমির সংস্থান দুরূহ। এ কারণে গ্রিডে সংযুক্ত বিভিন্ন স্থাপনা যেমন বাসা-বাড়ি, শিল্পকারখানার অব্যবহৃত ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে । ছাদে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধি পাবে । সোলার সিষ্টেম স্থাপনের জন্য অনগ্রিড বিদ্যুৎ গ্রাহককে নেট মিটারিং এর মাধ্যমে প্রণোদনা পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে । নেট মিটারিং পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ গ্রাহক নিজ স্থাপনায় স্থাপিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজে ব্যবহার করে এবং উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিতরণ গ্রিডে সরবরাহ করতে পারেন। এভাবে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলে পরবর্তী মাসের সাথে সমন্বয় করা হয় । এ প্রক্রিয়ার ফলে গ্রাহকের বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় হয় । প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের পঞ্চাশটিরও অধিক দেশে নেট মিটারিং পদ্ধতি চালু রয়েছে ।
নেট মিটার কি এবং কিভাবে কাজ করেঃ
এটি একটি বাইডিরেকশনাল বৈদ্যুতিক মিটার, যা বিদ্যুৎ শক্তি গ্রহণ এবং প্রেরণের হিসাব রেকর্ড করতে সক্ষম। এটি একটি পদ্ধতি/সিস্টেম যার মাধ্যমে গ্রাহক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি সিস্টেম (যেমন সোলার সিস্টেম) স্থাপন করবেন এবং সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজে ব্যবহার করবেন এবং ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রীডে সরবরাহ করার অনুমতি প্রাপ্ত হবেন। সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ এর জন্য গ্রাহক ক্রেডিট প্রাপ্ত হন, যা বিলিং পিরিয়ডের সাথে সমন্বয় করা হয় এবং অর্থ বছর শেষে অতিরিক্ত ক্রেডিটের জন্য বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত বাল্ক ট্যারিফে গ্রাহক মূল্য প্রাপ্ত হবেন। নেট মিটারিং-এ দুইটি বাণিজ্যিক মডেল চালু রয়েছে।
CAPEX (Capital expenditure) মডেলঃ বিদ্যুৎ গ্রাহক নিজস্ব বিনিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনায় সোলার সিষ্টেম (Renewable Energy) স্থাপন করে নেট মিটারের সুবিধা ভোগ করবেন। OPEX (Operational Expenditure) মডেলঃ গ্রাহক ব্যতীত অন্য কোনো বৈধ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সোলার হতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে ইউটিলিটি ও বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডেসকো’র নির্বাহী পরিচালক অপারেশন প্রকৌঃ মোঃ জাকির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী প্রকৌঃ মোঃ মফিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ নজরুল ইসলামসহ কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডেসকো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকৌঃ মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান।