স্টাফ রিপোর্টার- অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ’ সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ ও তাঁর দল সরকারি সাধারণ ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২২’ অর্জন করেছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে ‘অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ’ সিস্টেম উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
দলের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমা মোবারেক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মো: জাহিদ হোসেন পনির, পিএএ।
সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস, ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক থেকে তাঁরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২২’ ও সনদ গ্রহণ করেন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানি হ্রাস সহ ভূমি অফিসের দুর্নীতি কমাতে এবং ভূমি অফিসের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থাপিত অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সিস্টেমটি উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সিস্টেম এই বছর আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) কর্তৃক প্রদত্ত মর্যাদাপূর্ণ উইসিস পুরস্কার ২০২২ ও অর্জন করে।
উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ১০ লক্ষ হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তর করা হয়েছে। অনলাইন দাখিলা (রশিদ) প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমের মধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
বর্তমানে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমের মাধ্যমে ভূমি মালিকগণ ভূমি অফিসে না এসেই পৃথিবীর যে-কোন প্রান্ত থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের হটলাইন ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল land.gov.bd এ অথবা ‘ভূমি উন্নয়ন কর’ মোবাইল আ্যাপ-এর মাধ্যমে ঘরে বসেই এনআইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে অনলাইনে তাদের ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করছেন।
ভূমি মালিকগণ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সাথে-সাথে তাৎক্ষণিক-ভাবে অনলাইনে কিউআর কোড-সমৃদ্ধ যে দাখিলা পাচ্ছেন তা ম্যানুয়াল পদ্ধতির দাখিলার সমমানের এবং সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। এছাড়া, এ সিস্টেমের ফলে একদিকে একজন জমির মালিক রেজিস্ট্রেশন না করেও তার এনআইডি দিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারছেন কিংবা অটো-জেনারেটেড করের দাবীর পরিমাণের বিষয়ে আপত্তি তারা জানাতে পারছেন । এনআইডি নাম্বার দিয়ে একজন জমির মালিকের সকল তথ্য এই সিস্টেম থেকে জানা সম্ভব। অন্যদিকে, ভূমি অফিসের রেজিস্টারসমূহও ডিজিটাল হয় যাচ্ছে এবং ভূমি অফিসের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে আস্থার।
প্রসঙ্গত, ‘অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ’ সিস্টেম স্থাপনের পূর্বে ভূমি মালিক তথা জনসাধারণকে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের জন্য কষ্ট করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস পর্যন্ত যেতে হতো। এতে জনসাধারণের যেমন আর্থিক ক্ষতি হতো এবং তেমনি প্রচুর সময়ও ব্যয় হতো। এছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অজুহাতে তাদের ভূমি উন্নয়ন কর না নেওয়ার ঘটনাও ঘটত, বরং তাঁরা হয়রানির শিকার হতেন। ঐ সময় এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশের প্রায় ৪৫% ব্যক্তি এভাবে ভূমি অফিসের দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। ফলে পারতপক্ষে ভূমি অফিসে না গিয়ে তারা দালালদের সহায়তা নিয়ে থাকতেন। এতে ভূমি মালিক আর্থিক ক্ষতির শিকার হন, প্রতারিতও হন। এসব নানাবিধ কারণে অনেকেই সময়মত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে আগ্রহ দেখাতেন না তাঁরা। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও ব্যাহত হচ্ছিল। সর্বোপরি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিষয়ে ভূমি অফিসের প্রতি সাধারণ জনগণের খুবই খারাপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছিল। এরূপ বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানিসহ ভূমি অফিসের দুর্নীতি কমাতে এবং ভূমি অফিসের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অংশ হিসেবে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সিস্টেমটি চালু করে।