Search
Close this search box.
কোর্ট চত্তরে পরিচয়, জামিনে এসে সংঘবদ্ধ চুরি

বিপুল পরিমান চোরাই গার্মেন্টস পণ্যসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার- প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্যসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪) । নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানা এলাকার একটি স’মিল থেকে চোরাই গার্মেন্টস পণ্য ও ১ টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা।

রাজধানীর মিরপুরে র‌্যাব-৪ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে আয়োজিত এস সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো: আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সময় নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দস্থ ভাইভাই টিম্বার স’মিল এর টিনশেড গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত প্রায় ২৬৯৯৫ পিস গার্মেন্টস পণ্যসহ একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করে। এ সময় সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতাসহ ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের মূল হোতা মোঃ রিপন ওরফে  ছোট রিপন (৪৩), মোঃ বিল্লাল হোসেন @ ছোট বিল্লাল (৩৬),  নাঈম ইসলাম (২৭), মোঃ আকাশ (২৬), মোঃ সুমন (৩০), মোঃ ফরিদ (৩৮),  মোঃ মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮) ।

তিনি আরও বলেন সংঘবদ্ধ চক্রটি ফ্যাক্টরী থেকে মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার সময় পথিমধ্যে কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে কৌশলে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে।

চুরির কৌশল হিসেবে তিনি জানান, এ চক্রের এক বা একাধিক মাস্টারমাইন্ড থাকে যারা গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার ও হেলপারদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে। অল্প সময়ে অধিক অর্থ প্রাপ্তির আশায় ড্রাইভার ও হেলপারেরা চোর চক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে এই কাজে সহায়তা করে। কাভার্ড ভ্যানে পণ্য লোড করার সময় বন্দরে প্রদর্শনের জন্য গার্মেন্টেসের পক্ষ থেকে পণ্যের স্যাম্পল ড্রাইভারের কাছে দেওয়া হয়ে থাকে। এ স্যাম্পল পাওয়ার পরপরই ড্রাইভার সুযোগ বুঝে ছবি তুলে মূলহোতার কাছে পাঠায়। পণ্যের বাজার মূল্যের বিবেচনায় অধিক লাভজনক হলে মূলহোতা উক্ত ড্রাইভার ও হেলপারের সাথে পরবর্তী চুক্তিতে যায়। মূলহোতা পূর্বে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্জন যায়গায় অসাধু গোডাউন মালিকের সাথে আতাত করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোডাউন ব্যবহার করে যেখানে ড্রাইভার ও হেলপার গাইডের মাধ্যমে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানটি নিয়ে যায়। গোডাউনে পণ্য চুরির জন্য কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের পূর্বেই কার্টুন প্যাকেজিং ও লোড-আনলোড কাজে সিদ্ধহস্ত কয়েকজন সহযোগী সেখানে অবস্থান করে এবং দেড়-দুই ঘন্টা সময়ের মধ্যে মালামালের ৩০%-৪০% রেখে প্রত্যেক কার্টুনে সমপরিমান ঝুট কাপড় রেখে আবার পূর্বের ন্যায় কার্টুন সঠিকভাবে বাধাই করে কাভার্ড ভ্যানে লোড করে দেয়। এরপর কাভার্ড ভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশ্যে রাওনা করে গেলে চোর চক্রের নিজস্ব মিনি কাভার্ড ভ্যানে করে তাদের সুবিধামত যায়গায় নিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, চক্রটি ২৬ জানুয়ারি  বিকেলে পণ্য কাভার্ড ভ্যানে লোড করে তেজগাঁও এ গিয়ে কাভার্ড ভ্যানে ফুয়েল নেয় এবং পাম্পে গাইডের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করে। গাইড নাঈম সেখানে এসে মূলহোতা রিপনের নির্দেশ অনুযায়ী নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দস্থ ভাইভাই টিম্বার সমিল এর টিনশেড গোডাউনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। সেখানে পৌছানোর পর আগে থেকে অপেক্ষারত বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল, মোঃ ফরিদ এবং মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু গ্যান্ডিং মেশিনের মাধ্যমে কেটে প্রত্যেক কার্টুন গোডাউনের ভিতর নামায়। কার্টুন থেকে মালামাল চুরির সময় র‌্যাব-৪ এর আভিযানিক দল কাভার্ড ভ্যানটির ড্রাইভার, হেল্পার, ‘স’ মিল মালিক, লেবার সর্দারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তাদের মাস্টারমাইন্ড রিপন ও বিল্লাল কিছু সময়ের মধ্যে চোরাইকৃত গার্মেন্টস পণ্যগুলো বুঝে নিতে আসলে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়।

অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রিপন এই চক্রের মূলহোতা। সে প্রথম জীবনে ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে সোয়েটার ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। জীবিকার খোঁজে ২০০৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে যায়। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে এসে রেন্ট এ কার চালক হিসেবে কাজ করাকালে ভিন্ন  এক মামলায় জেলে যায়। কারাগার থেকে জামিন নিতে এসে পরিচয় হয় গামেন্টর্স পণ্য চোর চক্রের সদস্য বিল্লালের সাথে। তখন সে তাদের সহযোগী হিসেব কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে অধিক পরিমান লাভের আশায় গ্রেফতারকৃত আসামী রিপন নিজেই অপরাপর আসামী বিল্লাল হোসেন, নাঈম ইসলাম, আকাশ, সুমন, ফরিদ, মঞ্জুর হোসেন জিকুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৭ জনকে নিয়ে একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা চোর চক্র তৈরি করে।

গ্রেফতারকৃত আসামী বিল্লাল মূলহোতা রিপনের প্রধান সহযোগী। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় চোরচক্রের মূলহোতা রিপনের সাথে বিল্লালের পরিচয় হয়। আসামী বিল্লালের গ্রামের বাড়ি মুন্সিঞ্জের গজারিয়া এলাকায় এবং এই চুরির ঘটনাগুলো যেহেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সংঘঠিত হয়ে থাকে তাই মূলহোতা রিপন আসামী বিল্লাল’কে গোডাউন ভাড়া করার কাজের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকেই বিল্লাল গোডাউন ভাড়া করার বিষয়টি দেখে আসছে।

মূলহোতা রিপন গার্মেন্টস পণ্য চুরির জন্য যখন কোন একটি কাভার্ড ভ্যান নির্ধারণ করে ধৃত আসামী নাঈমকে অবগত করলে, সে উক্ত কাভার্ড ভ্যানটি ঢাকা থেকে পূর্ব নির্ধারিত গোডাউনে পৌছানো এবং গার্মেন্টস পণ্য চুরির সময় গোডাউনের আশেপাশে নজরদারিসহ সার্বিক দায়িত্বে থাকতো।

গ্রেফতারকৃত ফরিদ প্যাকেজিং করার কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় সে কার্টুন থেকে মালামাল বের করে পূনরায় কার্টুন প্যাকেজিং করতো। গ্রেফতারকৃত মঞ্জুর গোডাউনের মালিক এবং ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, তার কাছে থাকা গ্যানিং মিশিন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নাট-বল্টু কাটত। অপর আসামী ড্রাইভার আকাশ ও হেলপার সুমন মূলহোতা রিপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার কথামত নির্ধারিত গোডাউনে গাড়ি পার্ক করাতো। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

ইতোমধ্যে উদ্ধারকৃত গার্মেন্টস মালামালসমূহ সংশ্লিষ্ট পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাদের বলে সনাক্ত করেছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ