Search
Close this search box.

আজকের প্রজন্ম খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার চায়- শেখ পরশ

স্টাফ রিপোর্টার- জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত মন্তব্য করে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, আজকের প্রজন্ম খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার চায়।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তার পরবর্তী কার্যকলাপের মধ্যেই। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারকে সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা হত্যা করেছিল তাদের সেনা আইনে বিচার না করে যেন জিয়ার অবৈধ সরকার খুনিদের পুরষ্কৃত করে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক আবেদ খান। সঞ্চালনা করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একজন সাহসী বীরযোদ্ধা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সেনা অফিসার। বঙ্গবন্ধু তাঁর সেনা অফিসারদেরকেও সন্তানদের মতই ভালবাসতেন। সেই সন্তানতুল্য একদল উশৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তাদের হাতেই তাঁর লে. জামালের ও তাঁর নিজের প্রাণ যেতে হল। এই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারের রক্তপাত যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করেছিল, তাদের সেনা আইনে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ ও উপসেনা প্রধান জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানতো মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জিয়ার পরবর্তী কার্যকলাপের মধ্যেই।

পরশ বলেন, সংবিধান, গণতন্ত্র এমনকি সেনা আইন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, শেখ জামালসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের রক্তে রঞ্জিত এই জিয়াউর রহমানের হাত। সুতরাং জিয়াউর রহমানের বিএনপির নেতৃবৃন্দ যখন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলে, ওদের লজ্জা পাওয়া উচিৎ এবং এদেশের মানুষের কাছে মাফ চাওয়া উচিৎ ওদের অন্যায় এবং জাতির সাথে প্রতারণা করার জন্য।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি আজকের প্রজন্মের সময়ের দাবি। কাজেই আমি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে এই দাবি ব্যক্ত করছি।

তিনি আরও বলেন, শেখ জামাল ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ধানমন্ডির তারকাটাঁ বেড়া দেওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দি শিবির থেকে পালিয়ে ভারতে যান। ভারতের উত্তর প্রদেশের কালশীতে গিয়ে তার ফুফাতো ভাই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি’র নেতৃত্বাধীন মুজিব বাহিনীতে ৮০ জন নির্বাচিত তরুণের সঙ্গে শেখ জামাল ২১ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে শেখ ফজলুল হক মণির সাথেই মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। রণাঙ্গণে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল হয়ে উঠেছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর লক্ষ্য ছিল মাতৃভূমির স্বাধীনতা।

পরশ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শেখ জামালকে সেনা অফিসার হিসেবে গড়ে তুলতে। শহীদ শেখ জামাল পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী, একজন দেশপ্রেমিক চৌকস-মেধাবী সেনা অফিসার হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লং কোর্স-এর প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। ১৯৭৪ সালে শেখ জামাল মার্শাল টিটোর আমন্ত্রণে যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ব্রিটেনের বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সামরিক একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ছেলেকে স্যান্ডহার্স্ট পড়ানোর খরচটা দেওয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য ছিল না রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবের। সেই খরচটাও ভাই শেখ আবু নাসের এর কাছ থেকে নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এমনি সৎ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, শুধু শেখ জামালের জন্মদিন পালন করলে হবে না, শেখ জামাল সম্পর্কে জানতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে। শেখ জামাল লেখাপড়া করতে পছন্দ করতেন, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বই পড়তে আগ্রহ করতে হবে। ১৯৭৫ সালে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন তিনি শেখ জামালের দক্ষতা দেখে খুশি হয়েছিলেন এবং সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তার দেশে আমন্ত্রণ জানান।

সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আজও সেই খুনিরা ওঁত পেতে আছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের মহাসড়কে সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামাত তাদের বিদেশি প্রভুদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়ি ভাংচুরসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত। আজকের দিনে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বলতে চাই বিএনপি-জামাত যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আমরা এদেশের সাধারণ মানুষের পাশে থাকবো, তাদেরকে সাথে নিয়েই বিএনপি-জামাতের সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।

এসময় বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা।

আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, মো.. সোহেল পারভেজ, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তরসম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম মিল্টন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ