Search
Close this search box.

গাজীপুর সিটির ভোটগ্রহন শেষ, গণনা চলছে

স্টাফ রিপোর্টার- সারা দেশের সবার চোখ আজ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটে। বিদেশের কারও কারও চোখও থাকবে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোট ইতিমধ্যে বিকেল ৪ টায় শেষ হয়েছে । গণনাও শুরু হয়ে গেছে।  জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটির ভোটের প্রথমটিই গাজীপুরে। এরপর জুন পর্যন্ত বাকি চারটি সিটির ভোট হবে। ফলে এ ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেরও এক ধরনের পরীক্ষা হয়ে যাবে যে, তারা যে সুষ্ঠু ভোটের কথা বলে আস্থা অর্জন করতে চায়, তা সফল হবে কি না। তাই বিকেল ৪টায় ভোট শেষ হলেও রাত হয়ে যাবে সবকিছুর উত্তর পেতে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যে বারবার সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, দেশের মানুষ ও বিদেশিদের কাছে তারও পরীক্ষা হবে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে জয় পাওয়ার তাগিদও তাদের আছে। তাছাড়া দলীয় শক্তি পরীক্ষার বিষয়টিও রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ ভোটে জিততে চায় আওয়ামী লীগ, জিততে চায় সরকার। অন্যদিকে এ সিটির ভোট বিএনপি বর্জন করলেও কার্যসিদ্ধি করতে সক্রিয় তারা। এ ভোট থেকে ইস্যু খুঁজে বের করে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে চায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপি।

বিএনপি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চায় দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব, সেটা প্রমাণ করতে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেকেই অনেক কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে পারে, তাতে সরকারের-আওয়ামী লীগের কিছুই আসবে যাবে না।’ তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।

আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও বরখাস্তকৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং তার মা জায়েদা খাতুনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে জমে উঠেছে গাজীপুর সিটির ভোট। জাহাঙ্গীর জনপ্রিয় বলে গাজীপুরের নানা মহল দাবি করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগেও তার কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা বিপুল বলে দলের নেতারাও জানেন। সে কারণে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আজমত উল্লা খানের জয় নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তাই এ সিটির ভোটে জয়ী হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভীষণ তৎপর হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের অতি তৎপরতা দেখে সিটি ভোট নিয়ে সারা দেশের সাধারণ মানুষের ভেতরে নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ থাকবে তো, সরকারি দল জয় ছিনিয়ে নেবে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে তো, বিএনপির প্রার্থী না থাকলেও ভোটাররা ভোট দিতে ঘর থেকে বের হবে তো এসব নানা প্রশ্ন গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচন আওয়ামী লীগকে চাপে ও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

সাধারণ মানুষের মনেও এসব প্রশ্ন রয়েছে। এর ফলে গাজীপুরের ভোটকে ঘিরে সরকার ও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের ওপর কড়া নজরদারি রয়েছে। সারা দেশের মানুষের নজরদারির পাশাপাশি বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন এবং এ ভোটে তীক্ষè দৃষ্টি রাখবে বিদেশিরাও।

আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘নির্বাচনে না এসে, নির্বাচনের বিরোধিতা করা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলাই হলো বিএনপির কাজ। বিএনপি তো নির্বাচন ভয় পায়।’

সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের দুই মেরুতে অবস্থানের মধ্যেই গাজীপুর সিটি নির্বাচন বলা যায় বিপাকেই ফেলেছে ক্ষমতাসীনদের। কারণ এ ভোটে জিতে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে দলটির জনপ্রিয়তা এখনো রয়েছে। অন্যদিকে ভোটের পরিবেশ ঠিক রেখে দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে দলীয় সরকারের অধীনেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। উল্লিখিত দুটি বিষয়ই আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দুটির কোনোটাই ছাড়া যেমন কঠিন, তেমনি দুটি বিষয় রক্ষা করাও এই মুহূর্তে কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে।

সাধারণ মানুষ ছাড়াও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দাবি করা বিএনপি ও তাদের মিত্ররাও গাজীপুর সিটির ভোটকে কড়া নজরে রাখবে। কারণ ভোটে অনিয়ম করে প্রার্থী জেতাতে গেলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি করে আন্দোলন চলছে, সে আন্দোলনে গতি আসবে। আর নিয়মের ভেতরে থেকে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হলে সরকারের কোনো জনপ্রিয়তা নেই যে দাবি করে আসছে বিএনপি সেটা সত্য বলে প্রমাণ করা হবে। তাই নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে গাজীপুরের ভোট। আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি-প্রমাণ এ ভোট থেকে সংগ্রহ করতে চায় বিএনপি। এ সিটির ভোট থেকে বিএনপিও দুটি বিষয় ক্যাশ করতে চায়। সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের ভুলত্রুটি খুঁজে বের করা এবং এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি গ্রহণ করেছে, সেটাই ঠিক ছিল। মূলত ইস্যু খোঁজা করে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার মনোবাসনা নিয়ে গাজীপুরের ভোটের অপেক্ষা করছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এ নির্বাচন থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভুল খুঁজতে বিএনপি গাজীপুরে তীক্ষè নজর রাখবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচন হলো জনগণের রায়ের প্রতিফলন। এজন্য নির্বাচন ছাড়া আর কোনো উত্তম উপায় নেই।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যতটা প্রভাবমুক্ত রাখা যায়, ততটাই মঙ্গল দেশের জন্য, সবার জন্য।’

এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘নির্বাচন কার অধীনে হবে এ নিয়ে দেশে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনে গতি আসুক এমন কোনো ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটবে না গাজীপুরের নির্বাচনে আমি তা বিশ্বাস করি।’

নির্বাচন কশিনের আস্থা অর্জনের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। গাজীপুরে ভোটের প্রচারের শুরু থেকে সরকার দলের বিরুদ্ধে হামলা ও বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে আসছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। এ ছাড়া নির্বাচনে সমান সুযোগ নিয়েও অন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে। শেষ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের বাড়িতে হানা দেওয়া, ভয়ভীতি দেখানো ও আটকের অভিযোগ উঠছে। যদিও পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে নির্বাচন কমিশন শেষ মুহূর্তে ভোটারদের হুমকির অভিযোগে সরকার দলের সমর্থক এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে এক ধরনের বার্তা দিয়েছে।

কমিশন বলছে, তারা কোনো চাপে নেই। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আশাবাদী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গতকাল গাজীপুর সার্কিট হাউজে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সব ইলেকশন (ছোট-বড়) আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। আমাদের পক্ষ থেকেও কারও ওপর কোনো চাপ নেই।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ