স্টাফ রিপোর্টার- ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা নিয়ে পাঠাও চালক রিফাত ও কাজলের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় মাসখানেক আগে। কাজল তার পাওনা ফেরত চাইলে রিফাত পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয় কাজল। এরপর ক্ষোভ থেকেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ জুন তুরাগ নদীতে রিফাতকে নিয়ে ঘুরতে যায় কাজল। সেখান থেকে ফিরে আসার আগে নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের মধ্যে রিফাতকে মারধর করে কাজল। এরপর নৌকার মাঝির সহযোগিতায় রিফাতকে হাত-পা বেঁধে তুরাগ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত র্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ।
তিনি জানান, এই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী কাজলসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাঠাও চালক রিফাতকে বাসা থেকে ডেকে গুম করার উদ্দেশ্যে তুরাগ নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। এর মূল পরিকল্পনাকারী কাজল বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
এর আগে গত ৬ জুন বিকেলে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন রোদ্রপুর এলাকায় তুরাগ নদীতে একটি মরদেহ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে ভুক্তভোগী পরিবার মুখমণ্ডল ও পরিধেয় বস্ত্র দেখে মরদেহটি শরীফ হোসেন রিফাতের (২০) বলে শনাক্ত করে। ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা মো. ফারুক বাদী হয়ে জিএমপির গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য র্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
রোববার রাতে র্যাব-১ এর একটি দল ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি তাইজুল ইসলাম ওরফে কাজলকে (৩২) গ্রেফতার করে। টঙ্গী পূর্ব থানার আব্দুর রশিদের ছেলে কাজল। পরে কাজলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিফাত হত্যায় সহযোগী নৌকার মাঝি এমারত হোসেনকে (৩৮) গাজীপুরের গাছা থানাধীন পলাশোনা খেয়াঘাট এলাকা থেকে একই রাতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার তাইজুল ইসলাম কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্তের তথ্যের ভিত্তিতে অধিনায়ক বলেন, রিফাত ও কাজল পূর্ব পরিচিত এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক ছিল। আনুমানিক একমাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দেনা-পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। রিফাতের পরিবারের বক্তব্য কাজল ২০ হাজার টাকা পেতো। আর কাজলের দাবি পাওনা টাকার পরিমাণ ২৭ হাজার। রিফাত পাওনা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কাজল ক্ষিপ্ত হয়। রিফাতকে শায়েস্তা করতে হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ জুন বিকেল পাঁচটার দিকে কাজল তার সহযোগী সোহাগের সহায়তায় রিফাতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে তার বাসা থেকে ডেকে এনে তুরাগ নদী পার হয়ে তারা সাতাশকান্দি চরে যায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা নদীর অপর পাশ থেকে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা তুলে নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়ায় কাজল। একপর্যায়ে কাজল ও সোহাগ দুজন মিলে রিফাতকে কিল-ঘুষি মেরে নদীর পাড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। কাজল জালের রশি দিয়ে ভিকটিমের হাত বেঁধে ফেলে।
খেয়া ঘাটের অপর পাড়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাঝি এমারত হোসেনকে ডেকে আনা হয়। কাজল ও সোহাগ মিলে রিফাতকে টেনে-হিঁছড়ে ধরাধরি করে নৌকায় উঠায়। নৌকা মাঝ নদীতে নিয়ে রিফাতকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়।
পানিতে ডুবে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তারা সেখান থেকে দ্রুত ঘাটে চলে আসে। স্থানীয় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ভয়ে রিফাতের রেখে যাওয়া মোটরসাইকেল রেখে হেঁটে কিছুদূর এসে ইজিবাইকে করে যে যার বাড়িতে চলে যায়। রিফাতের পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করলে কাজলসহ তিনজনই আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাব-১ অধিনায়ক জানান, কাজলের বিরুদ্ধে গাজীপুর কোর্টে ও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।