সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে বলা হয়, কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০-৫০০ টাকা। এর উত্তরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কাঁচা মরিচ সারাবছর কেনেননি কেন? আপনারা একদিনের জন্য কাঁচা মরিচ কেনেন। কেউ তৈরি করবে বলেন? ক্ষেত লাগবে। কাঁচা মরিচ যদি ৪০০-৫০০ টাকায় কিনতে পারেন, তাহলে সবাই ইনভেস্ট করে কাঁচা মরিচ কম কম লাগাবেন (ব্যবহার)।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি না কমা নিয়ে করা সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন শুরু করি তখন মুল্যস্ফীতির ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। শুরু যখন করি, তার থেকে এখন বাড়েনিতো। মানুষ কেউ না খেয়ে আছে। মূল্যস্ফীতি আমরা শুধু টাকার অঙ্ক দিয়ে গুনছি না। আমরা সামাজিক সুরক্ষা খাতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ কোটি ২৬ লাখ পরিবারকে সহায়তা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে যাদের খাবার নেই, তাদের খাবার দিতে হবে। আমরা খাবার দিচ্ছি। ভ্যাট মাফ করতে হবে। আয়কর কম নিতে হবে। সেই কাজটি আমরা করছি।
মানুষ না খেয়ে নেয় ঠিক আছে, কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে মানুষ কষ্টে আছে এমন প্রশ্ননের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ কষ্ট করছে সারা বিশ্বে। আমরা বিশ্বের বাইরে নয়। আর আমাদের হাতে কিছু করার নেই। আমাদের হাতে যা আছে, তা দিয়ে চেষ্টা করছি। এতে করে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। খুব ভালো অবস্থানে রাখতে পারলে আমরা আরও খুশি হতাম।
জাইকা নতুন কোনো সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের প্রকল্পগুলো বর্তমানে কী অবস্থায় আছে, তারা তা দেখতে এসেছে। কিছু কিছু নতুন প্রকল্পও আসবে। নতুন যে প্রকল্পগুলো আসবে, সেগুলোর অধিকাংশই প্রযুক্তি সম্পর্কিত।
জাইকার বাজেট সহায়তাও আছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যে বাজেট, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে যেসব জায়গায় হাত দিতে হবে, কিছু কিছু জায়গা আছে, তারা নিজেরা আমাদের সহায়তা করতে পারে।
কৃচ্ছ্রতা থেকে আমরা কবে নাগাদ বের হতে পারবো? এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো জায়গায় আপনি খারাপ দেখেছেন। এ বছর আমেরিকায় তিনটি ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে। এতে বোঝা যায়, বিশ্ব অর্থনীতি কোন জায়গায় গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি আপনারা যদি বিবেচনা করেন, তাহলে আপনাকে মেনে নিতে হবে যে আমাদের অর্জন তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো।
সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইস্যুতে আমরা যে ঋণ অব্যাহত রয়েছে, সেটা বাদ দিয়ে দেবো? এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আইএমএফের এখানে কী। তারা যে ঋণ দিয়েছে, তা এ যে কয়েকজন আছেন এখানে, আমরা নিজেরাই শোধ দিতে পারবো। আমরা কয়েকজন মিলেই (শোধ দিতে পারবো)। আইএমএফ নামটা অনেক বড়। কিন্তু কী দিয়েছে, জানেন? সেটা আমাদের দুই মাসের রেমিট্যান্সের পরিমাণ। দুই মাসের রেমিট্যান্স হলো তাদের কাছ থেকে পাওয়া আমাদের ঋণ।
তাহলে কী নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা আমরা বুঝতে পারিনি। যুদ্ধ কতদিন থাকবে… যেভাবে আমাদের ঘাটতি পড়ছিল, আমরা যেসব জিনিস নিয়মিত ব্যবহার করি। তাতে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমরা তো তখন বুঝতে পারিনি।
বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের গেল কয়েক বছরের সামষ্টিক অর্থনীতির দৃশ্যপট আপনারা সেখানে দেখতে পাবেন। আমাদের যেমন প্রবৃদ্ধির হারের গেল তিন বছরের পাশাপাশি ফিগার আছে। ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০২১-২০২২ সালে সাত দশমিক ১০ শতাংশ, ২০২২-২০২৩ সালে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।
ন্যাশনাল ইনকাম পার ক্যাপিটা (মাথাপিছু আয়), যেটা নিয়ে সবাই সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এটা দুই হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। পরের অর্থবছরে এসে সেটা হয়েছে দুই হাজার ৭৯৩ ডলার। ২০২২-২০২৩ সালে এসে দুই হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার হয়েছে- যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রপ্তানি অনেকটা পড়ে গিয়েছিল। তখন এটি ছিল ৩৮ বিলিয়ন ডলার। পরের বছরে সেটা ছিল ৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সেই রপ্তানি হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স আসাও বেড়েছে। ২০২০-২০২১ বছরে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার।
বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, জাইকার এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।