ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে ৭০ ভাগ ভোট শেখ হাসিনা পাবেন। ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারবে না জেনে বিএনপি এখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার (২৩ জুলাই) দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
‘আওয়ামী লীগ ১০টি সিটও পাবে না’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৭০ ভাগ লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। আমি যা বললাম সেটা লিখে রাখুন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে কারো ফরমায়েশে নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে আদালতের রায়ে। এটাকে আর জীবিত করে লাভ নেই। দুনিয়ার সব দেশে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া ইলেকেশন হয়।
বাংলাদেশে কেন ইউরোপ-আমেরিকার নেতারা আসেন- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের কোন দেশে তত্ত্বাবধায়কে ভোট হয়েছে? ইউরোপও বলতে পারেনি, আমেরিকাও বলতে পারেনি। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাস যোগ্য ভোট করব। এ প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পারি। গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বলব, পর্যবেক্ষক দিয়ে এই ভোট পর্যবেক্ষণ করুন।
বিদেশিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন দেখলেন। এটা মাইনোর সিট অথচ পাঁচটি সিটিতে এক মাস হয়নি ইলেকশন হলো শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু। ওই নির্বাচনে ৫০ থেকে ৫৩ পার্সেন্ট ভোট পড়ল।
সেতুমন্ত্রী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি সজ্জন। কিন্ত কথাবার্তায় বড় বেসামাল। মির্জা ফখরুল কলেজের শিক্ষক, এত মিথ্যা কথা বলতে পারে, এত গালিগালাজ করতে পারে। তার মুখে এত বিষ ভাবতেও অবাক লাগে। দেখতে মনে একজন পাকা সাচ্চা ভদ্রলোক। কিন্ত কথা যখন বলে তখন মনে হয় একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ার।
ফখরুলের সমালোচনা করে কাদের বলেন, এই মিথ্যাবাদী এখন বলে তত্ত্বাবধায়ক এলে নাকি আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না। ২০০৮ সালে এই ফখরুল এবং তার নেত্রী বলে, আওয়ামী লীগকে মাত্র ৩০টি আসন দিয়েছি। কিন্ত নির্বাচনে দেখা গেল ৩০টি আসন বিএনপিই পেয়েছে। তারা যেটা আওয়ামী লীগকে দিতে চেয়েছে আল্লাহর হুকুম সে ৩০টি তাদের ভাগ্যে জুটেছে। এবার যে কী হবে জানি না। এবার আরও বেপরোয়া বেসামাল। ফখরুল লন্ডনের হুকুমে চলে। যে দণ্ডিত আসামি অর্থপাচার করে। মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গেছে। যে দলের নেতা দণ্ডিত আসামি, সেই দল এই দেশের মানুষ সমর্থন করতে পারে না।
oka2
বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, বিএনপি আরেকবার ক্ষমতায় গেলে এরা আবারও হাওয়া ভবন করবে। গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার আদর্শ, দেশের উন্নয়ন গিলে খাবে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশ গিলে খাবে। এই দলের কাছে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, আইনের শাসন, দেশের নিরাপত্তা, নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা নিরাপদ নয়। বিএনপি মানে ভোট চুরি, ভোট জালিয়াতি, বিএনপি মানে ভুয়া ভোটার তালিকা।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে করতে কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ইউরোপ-আমেরিকা এসেছে। বিএনপি ভেবেছে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই সরকারকে বিদায় দেবে। পাইলেন কী ঘোড়ার ডিম। ইউরোপ-আমেরিকা কী দিল। এখন বিএনপি নেতাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। নেতারা মুখে বলে না, পত্রিকায় গালিগালাজ করে। নোয়াখালীতে বিএনপির নেতারা এসে প্রধানমন্ত্রী এবং আমাকে ফখরুল নিজে ও তার নেতারা গালিগালাজ করেছে।
উন্নয়ন নিয়ে বিএনপি নেতাদের প্রসঙ্গে কাদের বলেন, বিএনপি বুঝতে পেরেছে ভোট দিলে এখন আওয়ামী লীগই জিতবে। বাংলাদেশের ৭০ পার্সেন্ট লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আমি যা বললাম বাস্তবে সেটা দিনক্ষণ লিখে রাখুন। কিছুতো দেখেন না। উন্নয়ন দেখেন না। নিজেরাতো কিছু করতে পারেন না। শেখ হাসিনা করেছেন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল। দেখলে বিএনপি নেতাদের বুকের জ্বালা বাড়ে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আগামী ২৭ জুলাই ঢাকাতে বিএনপির মহাসমাবেশ এ নিয়ে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি জাতীয় উন্নয়ন শোভাযাত্রা।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন।
এ সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, বসুরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাত, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম তানভীর, রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজীস সালেকীন রিমন, নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্যাহ ভূঁইয়া, বসুরহাট পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি সামছুদ্দিন নোমান উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মির্জা।
এর আগে, বেলা সোয়া ১১টার দিকে বসুরহাট পৌরসভায় বাস্তবায়িত নব আধুনিকায়নকৃত বসুরহাট বাসস্ট্যান্ড ও ৭৩৫টি সোলার বাতি স্থাপন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সেতুমন্ত্রী।